ঢাকা ০৬:৪৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৬ মার্চ ২০২৫, ১২ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
সেনাবাহিনীকে জনগণের মুখোমুখি করার চক্রান্ত শুরু হয়েছে যশোরের শহীদ পরিবারের মাঝে ঈদ উপহার সামগ্রি বিতরণ যশোরে অল্পের জন্য দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা যশোরে শিশু ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে যুবককে গণপিটুনি গাছের সঙ্গে মোটরসাইকেলের ধাক্কায় প্রাণ গেল কলেজছাত্রের গাজায় নৃশংস হত্যার প্রতিবাদে যশোরে সাংস্কৃতিক সংগঠনের বিক্ষোভ ফিলিস্তিনে বর্বর হামলার প্রতিবাদে যশোরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ যশোরের চিহ্নিত সন্ত্রাসী হত্যাসহ ২৪ মামলার আসামি ভাইপো রাকিব আটক যশোরে চাচাতো বোনকে ধর্ষণের দায়ে যুবকের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড আত্মসাতকৃত তিন হাজার বস্তা সরকারি ইউরিয়া সার উদ্ধার, গ্রেফতার তিন

শেওলা কাটা মেশিন আবিষ্কার করে সাড়া ফেলেছেন মণিরামপুরের প্রদীপ

বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : ০৩:৫৪:৩৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৭ মার্চ ২০২৫ ১৭ বার পড়া হয়েছে

ঘন-লম্বাকৃতির শেওলা (কচুরিপানা) কেটে দুইদিকে পড়ছে। কেটে ফাঁকা হয়ে যাওয়া কচুরিপানার ভিতর দিয়ে বয়ে চলেছে ডিঙ্গি নৌকা। এই ডিঙ্গি নৌকার ওপর বিশেষ কায়দায় ইঞ্জিনসহ অন্যান্য উপকরণ বসিয়ে শেওলা কাটা (কচুরিপানা) মেশিন উদ্ভাবন করে সাড়া ফেলে দিয়েছেন প্রদীপ বিশ্বাস। ইতোমধ্যে তার তৈরি মেশিন গোপালগঞ্জ পাউবো (পানি উন্নয়ন বোর্ড) কিনে নিয়ে গেছে। এছাড়া দেশের নানা প্রান্ত হতে যোগাযোগ করে মেশিন ভাড়া, ক্রয় ও তৈরির অর্ডার পাচ্ছেন।

প্রদীপ বিশ্বাস যশোরের মণিরামপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী কুচলিয়া গ্রামের মৃত প্রভাত চন্দ্র বিশ্বাসের ৪ ছেলের মধ্যে ছোট। বাবা ছিলেন অভয়নগর উপজেলার একটি জুট মিলের নামকরা মেকানিক। তার মেধার কারণে পন্ডিত নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন। বাবার হাত ধরেই এ পথে আসা প্রদীপের। সুন্দলী বাজারে রয়েছে প্রদীপ বিশ্বাসের ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ। পড়ালেখার গন্ডি বেশিদূর আগায়নি। সপ্তম শ্রেণিতে পড়াকালীন বাবা প্রভাত চন্দ্র বিশ্বাসের হাত ধরে এই মেকানিক লাইনে এসেছেন।

সরেজমিন মণিরামপুর উপজেলা সদর হতে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে সুন্দলী বাজারে গেলে দেখা যায় প্রদীপ বিশ্বাস নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ‘কুচলিয়া পিকেবি ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস’-এ একমনে কাজ করছেন। শেওলাকাটা মেশিনের কথা বলতেই তিনি জানান, পাশেই বিল বোকড়ে এক ঘের মালিক শেওলা কাটতে তার মেশিন ভাড়া করে নিয়ে গেছেন। হাতের কাজ শেষ হলে তাকে নিয়ে পায়ে হাঁটা পথে রওনা হই মেশিন নিয়ে কাজ করা সেই মাছের ঘেরে। প্রায় আধাঘন্টা পায়ে হাঁটার পর সেই বিলে গিয়ে দেখা যায় একটি মাছের ঘেরে মেশিন দিয়ে শেওলা কাটা হচ্ছে।

ঘেরে দায়িত্ব থাকা আদিত্য মন্ডল জানান, শেওলার কারণে ঘের হতে মাছ ধরা না যাওয়ায় মেশিনটি ভাড়া নিয়ে শেওলা কাটা হচ্ছে।

এসময় উপস্থিত মেশিনের উদ্ভাবক প্রদীপ বিশ্বাস বলেন, ভবদহের প্রভাবে এ অঞ্চলের নদী-খালগুলোতে পলি জমায় নাব্যতা হারিয়ে ফেলায় খাল-বিল ও নদীতে প্রচুর শেওলা জন্মেছে, যা সারা বছরই থাকে। এতে করে খাল-বিল ও নদীতে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। মূলত এই শেওলা থেকে পরিত্রাণের উপায় বের করার চিন্তার মধ্যে দিয়ে তিনি মেশিন আবিষ্কারে নেমে পড়েন।

তিনি আরও জানান, দুই বছর আগে ২২ হর্স-পাওয়ারের ইঞ্জিন, অ্যাঙ্গেল, পাত, কাঠ, চেইন, পেনিয়াম, গিয়ারবক্স, প্লেনসিড ও ১৯টি বিচালি কাটা ছুরি দিয়ে মেশিন বানালেও ঘন শেওলা কাটতে গেলেই মেশিন বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ডিঙ্গি নৌকা চালাতে ১১ হর্সপাওয়ার ও শেওলা কাটতে ২২ হর্সপাওয়ারের পৃথক দুটি ইঞ্জিনহ ৯টি ছুরি পাতের মধ্যে বিশেষ কায়দায় সেট করে মেশিনটি বানানো হয়। প্রায় তিন লাখ টাকা ব্যয়ে মাসখানেক কাজ করে তৈরি মেশিন শেওলা কাটার উপযোগী হয়। কেটে ফেলা কুচি কুচি শেওলা দিয়ে জৈব সার তৈরি সম্ভব বলে তিনি মনে করেন। ইতোমধ্যে তার তৈরি মেশিন গোপালগঞ্জ পাউবো (পানি উন্নয়ন বোর্ড) কিনে নিয়ে গেছে। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এ ধরনের উন্নতমানের মেশিন তৈরি সম্ভব।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

শেওলা কাটা মেশিন আবিষ্কার করে সাড়া ফেলেছেন মণিরামপুরের প্রদীপ

আপডেট সময় : ০৩:৫৪:৩৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৭ মার্চ ২০২৫

ঘন-লম্বাকৃতির শেওলা (কচুরিপানা) কেটে দুইদিকে পড়ছে। কেটে ফাঁকা হয়ে যাওয়া কচুরিপানার ভিতর দিয়ে বয়ে চলেছে ডিঙ্গি নৌকা। এই ডিঙ্গি নৌকার ওপর বিশেষ কায়দায় ইঞ্জিনসহ অন্যান্য উপকরণ বসিয়ে শেওলা কাটা (কচুরিপানা) মেশিন উদ্ভাবন করে সাড়া ফেলে দিয়েছেন প্রদীপ বিশ্বাস। ইতোমধ্যে তার তৈরি মেশিন গোপালগঞ্জ পাউবো (পানি উন্নয়ন বোর্ড) কিনে নিয়ে গেছে। এছাড়া দেশের নানা প্রান্ত হতে যোগাযোগ করে মেশিন ভাড়া, ক্রয় ও তৈরির অর্ডার পাচ্ছেন।

প্রদীপ বিশ্বাস যশোরের মণিরামপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী কুচলিয়া গ্রামের মৃত প্রভাত চন্দ্র বিশ্বাসের ৪ ছেলের মধ্যে ছোট। বাবা ছিলেন অভয়নগর উপজেলার একটি জুট মিলের নামকরা মেকানিক। তার মেধার কারণে পন্ডিত নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন। বাবার হাত ধরেই এ পথে আসা প্রদীপের। সুন্দলী বাজারে রয়েছে প্রদীপ বিশ্বাসের ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ। পড়ালেখার গন্ডি বেশিদূর আগায়নি। সপ্তম শ্রেণিতে পড়াকালীন বাবা প্রভাত চন্দ্র বিশ্বাসের হাত ধরে এই মেকানিক লাইনে এসেছেন।

সরেজমিন মণিরামপুর উপজেলা সদর হতে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে সুন্দলী বাজারে গেলে দেখা যায় প্রদীপ বিশ্বাস নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ‘কুচলিয়া পিকেবি ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস’-এ একমনে কাজ করছেন। শেওলাকাটা মেশিনের কথা বলতেই তিনি জানান, পাশেই বিল বোকড়ে এক ঘের মালিক শেওলা কাটতে তার মেশিন ভাড়া করে নিয়ে গেছেন। হাতের কাজ শেষ হলে তাকে নিয়ে পায়ে হাঁটা পথে রওনা হই মেশিন নিয়ে কাজ করা সেই মাছের ঘেরে। প্রায় আধাঘন্টা পায়ে হাঁটার পর সেই বিলে গিয়ে দেখা যায় একটি মাছের ঘেরে মেশিন দিয়ে শেওলা কাটা হচ্ছে।

ঘেরে দায়িত্ব থাকা আদিত্য মন্ডল জানান, শেওলার কারণে ঘের হতে মাছ ধরা না যাওয়ায় মেশিনটি ভাড়া নিয়ে শেওলা কাটা হচ্ছে।

এসময় উপস্থিত মেশিনের উদ্ভাবক প্রদীপ বিশ্বাস বলেন, ভবদহের প্রভাবে এ অঞ্চলের নদী-খালগুলোতে পলি জমায় নাব্যতা হারিয়ে ফেলায় খাল-বিল ও নদীতে প্রচুর শেওলা জন্মেছে, যা সারা বছরই থাকে। এতে করে খাল-বিল ও নদীতে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। মূলত এই শেওলা থেকে পরিত্রাণের উপায় বের করার চিন্তার মধ্যে দিয়ে তিনি মেশিন আবিষ্কারে নেমে পড়েন।

তিনি আরও জানান, দুই বছর আগে ২২ হর্স-পাওয়ারের ইঞ্জিন, অ্যাঙ্গেল, পাত, কাঠ, চেইন, পেনিয়াম, গিয়ারবক্স, প্লেনসিড ও ১৯টি বিচালি কাটা ছুরি দিয়ে মেশিন বানালেও ঘন শেওলা কাটতে গেলেই মেশিন বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ডিঙ্গি নৌকা চালাতে ১১ হর্সপাওয়ার ও শেওলা কাটতে ২২ হর্সপাওয়ারের পৃথক দুটি ইঞ্জিনহ ৯টি ছুরি পাতের মধ্যে বিশেষ কায়দায় সেট করে মেশিনটি বানানো হয়। প্রায় তিন লাখ টাকা ব্যয়ে মাসখানেক কাজ করে তৈরি মেশিন শেওলা কাটার উপযোগী হয়। কেটে ফেলা কুচি কুচি শেওলা দিয়ে জৈব সার তৈরি সম্ভব বলে তিনি মনে করেন। ইতোমধ্যে তার তৈরি মেশিন গোপালগঞ্জ পাউবো (পানি উন্নয়ন বোর্ড) কিনে নিয়ে গেছে। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এ ধরনের উন্নতমানের মেশিন তৈরি সম্ভব।