ঢাকা ০৭:৫৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১৫ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বাঘারপাড়ায় বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ, এলাকায় উত্তেজনা

প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় : ০৫:৫৬:২৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৭ মার্চ ২০২৫ ২১ বার পড়া হয়েছে

বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে আহত তিনজনকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে -কপোতাক্ষ

যশোরের বাঘারপাড়ার জহুরপুর ইউনিয়নে বিএনপি-জামায়াত কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে তিনজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।

বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলার বেতালপাড়া বাজারে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে স্থানীয় খাজুরা বাজার টিপিএম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে জামায়াতের নেতাকর্মীরা।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ব্যক্তিরা হলেন : বেতালপাড়া গ্রামের মৃত শামছুদ্দিন মন্ডলের ছেলে ও ৩নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বাবুল মন্ডল (৫৫), জামায়াতের কর্মী একই গ্রামের মৃত লাল চাঁদ বিশ্বাসের ছেলে ছুরমান বিশ্বাস (৫৬) ও ছুরমান বিশ্বাসেররেশ ছেলে মোমিন হোসেন (২৫)।

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, বিএনপি নেতা বাবুলের ছেলে মানসিকভাবে অসুস্থ। বৃহস্পতিবার সকালে নরসিংহপুর গ্রামে চাল সংগ্রহ করতে যান তিনি। এ সময় তার কাছে একটি সেলাই রেঞ্জ পাওয়ায় চোর সন্দেহে স্থানীয়রা তাকে মারধর করে। এ ঘটনার একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে সেখানে জামায়াতের কর্মী মোমিন কমেন্ট (মন্তব্য) করেন। এ নিয়ে সন্ধ্যার পর বেতালপাড়া বাজারে বাবুল ও মোমিনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে উভয়পক্ষের লোকজন সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এ সময় ধারালো অস্ত্রের আঘাতে বিএনপি নেতা বাবুল ও জামায়াতের কর্মী ছুরমান ও তার ছেলে মোমিন জখমসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। এর মধ্যে জখম তিনজনকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এদিকে, অভিযুক্তদের আটকের দাবিতে রাত নয়টায় জহুরপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবু তালেবের নেতৃত্বে অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী খাজুরা পুলিশ ক্যাম্পে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।

আবু তালেব বলেন, ঘটনার পর বাবুলের লোকজন ধাওয়া করে মোমিন ও তার বাবা সুরমানকে খালিয়া এলাকা থেকে ধরে পুলিশকে খবর দেয়। কিন্তু পুলিশ তাদের ছেড়ে দেয়। অভিযুক্ত মোমিন নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের কর্মী ছিলেন বলে দাবি করেন বিএনপি নেতা আবু তালেব। এরই প্রতিবাদে শুক্রবার বেলা ১১টায় খাজুরা বাজার টিপিএম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাল্টা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন জামায়াতের নেতাকর্মীরা।

জহুরপুর ইউনিয়ন জামায়াতের সেক্রেটারি মাওলানা মঞ্জুর কাদের বলেন, বন্ধুপ্রতীম সংগঠন বিএনপির স্থানীয় নেতৃবৃন্দ জামায়াত সম্পর্কে পুলিশের কাছে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়েছেন। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। আসল ঘটনা হলো, আমাদের নেতৃবৃন্দ আহতদের হাসপাতালে পাঠাতে সহযোগিতা করেছেন। পুলিশের কাছ থেকে আসামি ছিনতাইয়ের কোনো ঘটনাও ঘটেনি। সংঘাতের সময় ঘটনাস্থলে জামায়াতের কর্মীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ বা ছাত্রলীগের কেউ ছিলেন না।

খাজুরা পুলিশ ক্যাম্পের উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ঘটনাস্থল থেকে ফেরার পথে ইজিবাইকে দুই ব্যক্তিকে হাসপাতালে যেতে দেখেন টুআইসি রাশেদ। এ সময় বিএনপি নেতা তালেব তাদেরকে আসামি বলে আটক করতে বলেন। তখন উপস্থিত বিএনপি-জামায়াতের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা করে রাশেদ বলেন, আগে আহতদের চিকিৎসা হবে। মামলা হলে অভিযুক্তদের আটক করা যাবে। এ ঘটনায় পুলিশ কাউকে আটক করেনি, আবার ছেড়েও দেয়নি বলে জানান এসআই আব্দুর রাজ্জাক।

বাঘারপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফকির তাইজুর রহমান জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। বিএনপি-জামায়াত উভয়পক্ষের লোকই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। পুনরায় সংঘাত এড়াতে পুলিশ সদস্যদের নিয়োজিত রাখা হয়েছে। তদন্ত চলছে। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

বাঘারপাড়ায় বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ, এলাকায় উত্তেজনা

আপডেট সময় : ০৫:৫৬:২৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৭ মার্চ ২০২৫

যশোরের বাঘারপাড়ার জহুরপুর ইউনিয়নে বিএনপি-জামায়াত কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে তিনজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।

বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলার বেতালপাড়া বাজারে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে স্থানীয় খাজুরা বাজার টিপিএম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে জামায়াতের নেতাকর্মীরা।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ব্যক্তিরা হলেন : বেতালপাড়া গ্রামের মৃত শামছুদ্দিন মন্ডলের ছেলে ও ৩নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বাবুল মন্ডল (৫৫), জামায়াতের কর্মী একই গ্রামের মৃত লাল চাঁদ বিশ্বাসের ছেলে ছুরমান বিশ্বাস (৫৬) ও ছুরমান বিশ্বাসেররেশ ছেলে মোমিন হোসেন (২৫)।

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, বিএনপি নেতা বাবুলের ছেলে মানসিকভাবে অসুস্থ। বৃহস্পতিবার সকালে নরসিংহপুর গ্রামে চাল সংগ্রহ করতে যান তিনি। এ সময় তার কাছে একটি সেলাই রেঞ্জ পাওয়ায় চোর সন্দেহে স্থানীয়রা তাকে মারধর করে। এ ঘটনার একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে সেখানে জামায়াতের কর্মী মোমিন কমেন্ট (মন্তব্য) করেন। এ নিয়ে সন্ধ্যার পর বেতালপাড়া বাজারে বাবুল ও মোমিনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে উভয়পক্ষের লোকজন সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এ সময় ধারালো অস্ত্রের আঘাতে বিএনপি নেতা বাবুল ও জামায়াতের কর্মী ছুরমান ও তার ছেলে মোমিন জখমসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। এর মধ্যে জখম তিনজনকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এদিকে, অভিযুক্তদের আটকের দাবিতে রাত নয়টায় জহুরপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবু তালেবের নেতৃত্বে অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী খাজুরা পুলিশ ক্যাম্পে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।

আবু তালেব বলেন, ঘটনার পর বাবুলের লোকজন ধাওয়া করে মোমিন ও তার বাবা সুরমানকে খালিয়া এলাকা থেকে ধরে পুলিশকে খবর দেয়। কিন্তু পুলিশ তাদের ছেড়ে দেয়। অভিযুক্ত মোমিন নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের কর্মী ছিলেন বলে দাবি করেন বিএনপি নেতা আবু তালেব। এরই প্রতিবাদে শুক্রবার বেলা ১১টায় খাজুরা বাজার টিপিএম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাল্টা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন জামায়াতের নেতাকর্মীরা।

জহুরপুর ইউনিয়ন জামায়াতের সেক্রেটারি মাওলানা মঞ্জুর কাদের বলেন, বন্ধুপ্রতীম সংগঠন বিএনপির স্থানীয় নেতৃবৃন্দ জামায়াত সম্পর্কে পুলিশের কাছে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়েছেন। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। আসল ঘটনা হলো, আমাদের নেতৃবৃন্দ আহতদের হাসপাতালে পাঠাতে সহযোগিতা করেছেন। পুলিশের কাছ থেকে আসামি ছিনতাইয়ের কোনো ঘটনাও ঘটেনি। সংঘাতের সময় ঘটনাস্থলে জামায়াতের কর্মীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ বা ছাত্রলীগের কেউ ছিলেন না।

খাজুরা পুলিশ ক্যাম্পের উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ঘটনাস্থল থেকে ফেরার পথে ইজিবাইকে দুই ব্যক্তিকে হাসপাতালে যেতে দেখেন টুআইসি রাশেদ। এ সময় বিএনপি নেতা তালেব তাদেরকে আসামি বলে আটক করতে বলেন। তখন উপস্থিত বিএনপি-জামায়াতের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা করে রাশেদ বলেন, আগে আহতদের চিকিৎসা হবে। মামলা হলে অভিযুক্তদের আটক করা যাবে। এ ঘটনায় পুলিশ কাউকে আটক করেনি, আবার ছেড়েও দেয়নি বলে জানান এসআই আব্দুর রাজ্জাক।

বাঘারপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফকির তাইজুর রহমান জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। বিএনপি-জামায়াত উভয়পক্ষের লোকই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। পুনরায় সংঘাত এড়াতে পুলিশ সদস্যদের নিয়োজিত রাখা হয়েছে। তদন্ত চলছে। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।