ঢাকা ০৭:৫৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৬ মার্চ ২০২৫, ১২ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
সেনাবাহিনীকে জনগণের মুখোমুখি করার চক্রান্ত শুরু হয়েছে যশোরের শহীদ পরিবারের মাঝে ঈদ উপহার সামগ্রি বিতরণ যশোরে অল্পের জন্য দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা যশোরে শিশু ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে যুবককে গণপিটুনি গাছের সঙ্গে মোটরসাইকেলের ধাক্কায় প্রাণ গেল কলেজছাত্রের গাজায় নৃশংস হত্যার প্রতিবাদে যশোরে সাংস্কৃতিক সংগঠনের বিক্ষোভ ফিলিস্তিনে বর্বর হামলার প্রতিবাদে যশোরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ যশোরের চিহ্নিত সন্ত্রাসী হত্যাসহ ২৪ মামলার আসামি ভাইপো রাকিব আটক যশোরে চাচাতো বোনকে ধর্ষণের দায়ে যুবকের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড আত্মসাতকৃত তিন হাজার বস্তা সরকারি ইউরিয়া সার উদ্ধার, গ্রেফতার তিন

যশোর জেলা বিএনপির সম্মেলনে তারেক রহমান

স্বৈরাচারের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে আড়াই বছর আগে বিএনপি দেশ পুনর্গঠনের কথা বলেছে

বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : ০২:১৫:১৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ ২০ বার পড়া হয়েছে

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যশোর জেলা বিএনপির সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন -কপোতাক্ষ

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, এখন অনেকেই সংস্কার প্রস্তাবের নামে বিভিন্নজন বিভিন্ন কথা বলছেন। কিন্তু স্বৈরাচারের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে আড়াই বছর আগে একমাত্র বিএনপি দেশ পুনর্গঠনের কথা বলেছে, ৩১ দফা ঘোষণা করেছে। বিএনপির রাজনীতির মূললক্ষ্য জনগণ ও দেশ। তাই ভেঙে পড়া রাষ্ট্রকে গঠন বিএনপির পক্ষেই সম্ভব। বিএনপি দেশ পরিচালনার সুযোগ পেলে সবার আগে রাষ্ট্র কাঠামো পুনর্গঠন করবে। দেশের মানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী দেশ পুনর্গঠনে দ্রুততম সময়ে স্বচ্ছ নির্বাচন উপহার দেয়ার জন্য তিনি অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

আজ (শনিবার) ঈদগাহে যশোর জেলা বিএনপির সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সকালে সম্মেলন উদ্বোধন করেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান।

ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, কাউন্সিলের মাধ্যমে যারা নির্বাচিত হবেন, তারা বিএনপির বার্তা প্রান্তিক মানুষের কাছে পৌঁছে দেবেন। যারা অধিকারের পক্ষে ছিলেন, তারা সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরবেন জনগনের অভ্যুত্থানের মাধ্যমে কিভাবে স্বৈরাচার পালিয়ে গেছে। মানুষের ধনসম্পদ কিভাবে লুটতরাজ হয়েছে, কিভাবে মানুষ নির্যাতিত হয়েছে। অতীতে বিভিন্ন সময় যখন আমরা দেশ পরিচালনা করেছি, তখন মানুষের কল্যাণে কাজ করেছি। হতে পারে সব সমস্যার সমাধান আমরা করতে পারিনি। এই মুহূর্তে রাষ্ট্র পুনর্গঠন করার জন্য ৩১ দফা দিয়েছি। কেন পুনর্গঠন করব? স্বৈরাচার দেশের অর্থনীতি, বিচার, প্রশাসন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য প্রতিটা সেক্টরকে ধ্বংস করে দিয়েছে। এজন্য রাষ্ট্র কাঠামো পুনর্গঠন করা দরকার। আজ যারা কথা বলছেন তাদের সাথে পার্থক্য হলো আমরা স্বৈরাচারের চোখে চোখ রেখে বলেছি তোমরা ধ্বংস করছ। তোমরা হত্যা-গুম করছ। আমরা পুনর্গঠন করব।

তিনি বলেন, বিএনপি বিশাল দল। স্বৈরাচারি সরকারের সময় লক্ষ লক্ষ গায়েবি মামলা দেয়া হয়েছে। ৬০ লক্ষ নেতাকর্মীর নামে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে। হতে পারে কোনো কোনো নেতাকর্মী বিভ্রান্ত হয়ে এমন কোনো কাজ করেছেন, যাতে বলা হচ্ছে ঐ দেখো বিএনপি কী করেছে। আসলে জনগনের সমর্থন নেই এমন কোনো কাজ বিএনপি করে না। বিভ্রান্ত হয়ে অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়া নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তাই বিএনপির বিরুদ্ধে কারও অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হবেন না। বিএনপি একমাত্র দল যারা প্রমাণ করেছে অন্যায়ের সঙ্গে আপোষ করে না।

তিনি বলেন, দেশে এখন কোটির কাছে বেকার। আমরা রাষ্ট্র কাঠামো এমনভাবে সংস্কার করতে চাই, যাতে বেকারদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়। শিক্ষার সুযোগ সুদৃঢ় করা যায়। নারীদের কর্মসংস্থান ও ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা যায়। মানুষের স্বাস্থ্যের ব্যবস্থা এমনভাবে করতে চাই, যেন দেশে বসেই সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব। আমরা খাল কাটা কর্মসূচি ফিরিয়ে এনে সেচের ব্যবস্থা করব, যাতে খাল-বিলে পানি প্রবাহ নিশ্চিত করা যায়।

তিনি আরও বলেন, যে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আমরা বিগত ১৭টি বছর আন্দোলন করেছি, সেই স্বৈরাচার আজ পলাতক। তারা বিভিন্নভাবে মাথাচাড়া দেওয়ার চেষ্টা করছে। ষড়যন্ত্রকারীরা কিন্তু বসে নেই। বিভিন্ন দাবিদাওয়ার উছিলায় বিভিন্ন রকম ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে তারা তাদের ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে। তাদের এই লক্ষ্য আমরা হাসিল করতে দিতে পারি না। দেশের মানুষকে যদি রক্ষা করতে হয়, সর্বোপরি বাংলাদেশকে যদি রক্ষা করতে হয়, তাহলে আমাদের সবাইকে যেকোনো মূল্যে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের মধ্যে মতপার্থক্য থাকতেই পারে। আমরা বসব, আলোচনা করব। এক আলোচনায় শেষ না হলে আবার আলোচনায় বসব। আলোচনার মাধ্যমেই আমরা সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করব। আমাদের অনেক কাজ। দেশকে পুনর্গঠনের কাজ।

দীর্ঘ ১৬ বছর পর যশোর জেলা বিএনপির দ্বি বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। বেলা সাড়ে ১০টার দিকে স্থানীয় কেন্দ্রীয় ঈদগাহে জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন শেষে বেলুন উড়িয়ে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। সম্মেলনের উদ্বোধন করেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান। সম্মেলনের শুরুতে বিভিন্ন সময় আন্দোলন-সংগ্রামে নিহত দলের নেতা-কর্মীদের স্মরণে মঞ্চে শোক প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। সাম্প্রতিক সময়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ ছাত্র-জনতা, বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের প্রয়াত সদস্যদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া করা হয়।

সাংগঠনিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু।

সম্মেলন ঘিরে স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীরা ছিল উচ্ছ্বসিত। শহরজুড়ে সাজসজ্জার বাহার, প্রধান সড়কগুলোতে ব্যানার-ফেস্টুনের ছড়াছড়ি, জাতীয় নেতাদের নামে নির্মিত তোরণ বাড়িয়েছে উৎসবের আমেজ। এর আগে সম্মেলন উপলক্ষে সকাল ৯টা থেকেই ডেলিগেট, কাউন্সিলর ও আমন্ত্রিত অতিথিরা আসতে থাকেন। সকাল ১০টার মধ্যে সম্মেলনস্থল কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। জেলা উপজেলা ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীরা মিছিলসহকারে উপস্থিত হন।

উপস্থিত নেতাকর্মীরা জানান, দলের দুর্দিনে যারা ত্যাগ স্বীকার করেছেন, নির্যাতন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন তারা যেন সঠিক মূল্যায়ন পান। দলকে সুসংগঠিত করে আগামী সংসদ নির্বাচনে বিএনপি বিজয়ী করতে ভূমিকা রাখবে এমন নেতৃত্ব চান নেতাকর্মীরা।

দলীয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ যশোর জেলা বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ২০০৯ সালে। সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠনের ১০ বছর পর ২০১৯ সালের ২০ এপ্রিল যশোর জেলা বিএনপির কমিটি ভেঙে আহ্বায়ক কমিটি করা হয়। এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী প্রয়াত তরিকুল ইসলামের সহধর্মিনী অধ্যাপক নার্গিস বেগম আহ্বায়ক এবং সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু সদস্যসচিব হন। ঐ কমিটিকে তিন মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে বলা হলেও পেরিয়ে যায় ৬ বছর। শীর্ষ নেতারা বলছেন, বিভিন্ন সময়ে ভোটের মাধ্যমে কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। কিন্তু ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের একদলীয় শাসনব্যবস্থা চালু করার কারণে আন্দোলন ও কমিটি গঠন ঝিমিয়ে পড়ে। গত বছরের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত হয়ে দলীয় বিভিন্ন প্রোগ্রামে অংশ নিতে থাকেন। সেই থেকে প্রায় প্রতিদিন ছোট-বড় বিভিন্ন কর্মসূচি চলমান রয়েছে দলটির। সম্মেলন সফল ও সার্থক করতে কয়েকদিন ধরেই দিনরাত কাজ করেছেন বিএনপি ও তার অঙ্গ সংগঠনের অসংখ্য নেতা-কর্মী।

১৬ বছর পর এই সম্মেলনে সভাপতি ও সাংগঠনিক সম্পাদক এই দুটি পদে নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব নির্ধারিত হবে। সাধারণ সম্পাদক পদে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় দেলোয়ার হোসেন খোকনের জয় নিশ্চিত।

অন্যদিকে সভাপতি ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে সাতজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন। সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন দলের সদস্য সচিব সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ও যশোর চেম্বারের সভাপতি মিজানুর রহমান খান এবং যশোর পৌরসভার সাবেক মেয়র মারুফুল ইসলাম মারুফ। সাংগঠনিক সম্পাদক পদের জন্য লড়ছেন নগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুনির আহমেদ সিদ্দিকী বাচ্চু, জেলা স্বেচ্ছাসেবকদলের সদ্য বিদায়ী কমিটির সভাপতি প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম, যশোর সদর উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী আজম ও সাবেক ছাত্রনেতা শহিদুল বারী রবু। বিএনপি নেতাকর্মীদের মতে, সভাপতি ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে, তবে ত্যাগী ও যোগ্য নেতারাই জয়ী হবেন বলে প্রত্যাশা।

সম্মেলনের দ্বিতীয় পর্বে দুপুর দুইটা থেকে বিকাল পাচটা পর্যন্ত যশোর মুন্সী মেহেরুল্লাহ ময়দানের আলমগীর সিদ্দিকী হলে নেতা নির্বাচনের ভোট গ্রহণ করা হয়। আট উপজেলার ১৬টি ইউনিটে ১৬১৬ ভোটার ভোট প্রদান করেন। দীর্ঘদিন পর অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনকে ঘিরে দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা গেছে।

যশোরে বিএনপির রাজনীতিতে এই সম্মেলন নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

যশোর জেলা বিএনপির সম্মেলনে তারেক রহমান

স্বৈরাচারের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে আড়াই বছর আগে বিএনপি দেশ পুনর্গঠনের কথা বলেছে

আপডেট সময় : ০২:১৫:১৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, এখন অনেকেই সংস্কার প্রস্তাবের নামে বিভিন্নজন বিভিন্ন কথা বলছেন। কিন্তু স্বৈরাচারের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে আড়াই বছর আগে একমাত্র বিএনপি দেশ পুনর্গঠনের কথা বলেছে, ৩১ দফা ঘোষণা করেছে। বিএনপির রাজনীতির মূললক্ষ্য জনগণ ও দেশ। তাই ভেঙে পড়া রাষ্ট্রকে গঠন বিএনপির পক্ষেই সম্ভব। বিএনপি দেশ পরিচালনার সুযোগ পেলে সবার আগে রাষ্ট্র কাঠামো পুনর্গঠন করবে। দেশের মানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী দেশ পুনর্গঠনে দ্রুততম সময়ে স্বচ্ছ নির্বাচন উপহার দেয়ার জন্য তিনি অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

আজ (শনিবার) ঈদগাহে যশোর জেলা বিএনপির সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সকালে সম্মেলন উদ্বোধন করেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান।

ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, কাউন্সিলের মাধ্যমে যারা নির্বাচিত হবেন, তারা বিএনপির বার্তা প্রান্তিক মানুষের কাছে পৌঁছে দেবেন। যারা অধিকারের পক্ষে ছিলেন, তারা সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরবেন জনগনের অভ্যুত্থানের মাধ্যমে কিভাবে স্বৈরাচার পালিয়ে গেছে। মানুষের ধনসম্পদ কিভাবে লুটতরাজ হয়েছে, কিভাবে মানুষ নির্যাতিত হয়েছে। অতীতে বিভিন্ন সময় যখন আমরা দেশ পরিচালনা করেছি, তখন মানুষের কল্যাণে কাজ করেছি। হতে পারে সব সমস্যার সমাধান আমরা করতে পারিনি। এই মুহূর্তে রাষ্ট্র পুনর্গঠন করার জন্য ৩১ দফা দিয়েছি। কেন পুনর্গঠন করব? স্বৈরাচার দেশের অর্থনীতি, বিচার, প্রশাসন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য প্রতিটা সেক্টরকে ধ্বংস করে দিয়েছে। এজন্য রাষ্ট্র কাঠামো পুনর্গঠন করা দরকার। আজ যারা কথা বলছেন তাদের সাথে পার্থক্য হলো আমরা স্বৈরাচারের চোখে চোখ রেখে বলেছি তোমরা ধ্বংস করছ। তোমরা হত্যা-গুম করছ। আমরা পুনর্গঠন করব।

তিনি বলেন, বিএনপি বিশাল দল। স্বৈরাচারি সরকারের সময় লক্ষ লক্ষ গায়েবি মামলা দেয়া হয়েছে। ৬০ লক্ষ নেতাকর্মীর নামে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে। হতে পারে কোনো কোনো নেতাকর্মী বিভ্রান্ত হয়ে এমন কোনো কাজ করেছেন, যাতে বলা হচ্ছে ঐ দেখো বিএনপি কী করেছে। আসলে জনগনের সমর্থন নেই এমন কোনো কাজ বিএনপি করে না। বিভ্রান্ত হয়ে অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়া নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তাই বিএনপির বিরুদ্ধে কারও অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হবেন না। বিএনপি একমাত্র দল যারা প্রমাণ করেছে অন্যায়ের সঙ্গে আপোষ করে না।

তিনি বলেন, দেশে এখন কোটির কাছে বেকার। আমরা রাষ্ট্র কাঠামো এমনভাবে সংস্কার করতে চাই, যাতে বেকারদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়। শিক্ষার সুযোগ সুদৃঢ় করা যায়। নারীদের কর্মসংস্থান ও ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা যায়। মানুষের স্বাস্থ্যের ব্যবস্থা এমনভাবে করতে চাই, যেন দেশে বসেই সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব। আমরা খাল কাটা কর্মসূচি ফিরিয়ে এনে সেচের ব্যবস্থা করব, যাতে খাল-বিলে পানি প্রবাহ নিশ্চিত করা যায়।

তিনি আরও বলেন, যে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আমরা বিগত ১৭টি বছর আন্দোলন করেছি, সেই স্বৈরাচার আজ পলাতক। তারা বিভিন্নভাবে মাথাচাড়া দেওয়ার চেষ্টা করছে। ষড়যন্ত্রকারীরা কিন্তু বসে নেই। বিভিন্ন দাবিদাওয়ার উছিলায় বিভিন্ন রকম ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে তারা তাদের ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে। তাদের এই লক্ষ্য আমরা হাসিল করতে দিতে পারি না। দেশের মানুষকে যদি রক্ষা করতে হয়, সর্বোপরি বাংলাদেশকে যদি রক্ষা করতে হয়, তাহলে আমাদের সবাইকে যেকোনো মূল্যে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের মধ্যে মতপার্থক্য থাকতেই পারে। আমরা বসব, আলোচনা করব। এক আলোচনায় শেষ না হলে আবার আলোচনায় বসব। আলোচনার মাধ্যমেই আমরা সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করব। আমাদের অনেক কাজ। দেশকে পুনর্গঠনের কাজ।

দীর্ঘ ১৬ বছর পর যশোর জেলা বিএনপির দ্বি বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। বেলা সাড়ে ১০টার দিকে স্থানীয় কেন্দ্রীয় ঈদগাহে জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন শেষে বেলুন উড়িয়ে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। সম্মেলনের উদ্বোধন করেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান। সম্মেলনের শুরুতে বিভিন্ন সময় আন্দোলন-সংগ্রামে নিহত দলের নেতা-কর্মীদের স্মরণে মঞ্চে শোক প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। সাম্প্রতিক সময়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ ছাত্র-জনতা, বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের প্রয়াত সদস্যদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া করা হয়।

সাংগঠনিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু।

সম্মেলন ঘিরে স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীরা ছিল উচ্ছ্বসিত। শহরজুড়ে সাজসজ্জার বাহার, প্রধান সড়কগুলোতে ব্যানার-ফেস্টুনের ছড়াছড়ি, জাতীয় নেতাদের নামে নির্মিত তোরণ বাড়িয়েছে উৎসবের আমেজ। এর আগে সম্মেলন উপলক্ষে সকাল ৯টা থেকেই ডেলিগেট, কাউন্সিলর ও আমন্ত্রিত অতিথিরা আসতে থাকেন। সকাল ১০টার মধ্যে সম্মেলনস্থল কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। জেলা উপজেলা ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীরা মিছিলসহকারে উপস্থিত হন।

উপস্থিত নেতাকর্মীরা জানান, দলের দুর্দিনে যারা ত্যাগ স্বীকার করেছেন, নির্যাতন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন তারা যেন সঠিক মূল্যায়ন পান। দলকে সুসংগঠিত করে আগামী সংসদ নির্বাচনে বিএনপি বিজয়ী করতে ভূমিকা রাখবে এমন নেতৃত্ব চান নেতাকর্মীরা।

দলীয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ যশোর জেলা বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ২০০৯ সালে। সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠনের ১০ বছর পর ২০১৯ সালের ২০ এপ্রিল যশোর জেলা বিএনপির কমিটি ভেঙে আহ্বায়ক কমিটি করা হয়। এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী প্রয়াত তরিকুল ইসলামের সহধর্মিনী অধ্যাপক নার্গিস বেগম আহ্বায়ক এবং সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু সদস্যসচিব হন। ঐ কমিটিকে তিন মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে বলা হলেও পেরিয়ে যায় ৬ বছর। শীর্ষ নেতারা বলছেন, বিভিন্ন সময়ে ভোটের মাধ্যমে কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। কিন্তু ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের একদলীয় শাসনব্যবস্থা চালু করার কারণে আন্দোলন ও কমিটি গঠন ঝিমিয়ে পড়ে। গত বছরের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত হয়ে দলীয় বিভিন্ন প্রোগ্রামে অংশ নিতে থাকেন। সেই থেকে প্রায় প্রতিদিন ছোট-বড় বিভিন্ন কর্মসূচি চলমান রয়েছে দলটির। সম্মেলন সফল ও সার্থক করতে কয়েকদিন ধরেই দিনরাত কাজ করেছেন বিএনপি ও তার অঙ্গ সংগঠনের অসংখ্য নেতা-কর্মী।

১৬ বছর পর এই সম্মেলনে সভাপতি ও সাংগঠনিক সম্পাদক এই দুটি পদে নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব নির্ধারিত হবে। সাধারণ সম্পাদক পদে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় দেলোয়ার হোসেন খোকনের জয় নিশ্চিত।

অন্যদিকে সভাপতি ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে সাতজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন। সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন দলের সদস্য সচিব সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ও যশোর চেম্বারের সভাপতি মিজানুর রহমান খান এবং যশোর পৌরসভার সাবেক মেয়র মারুফুল ইসলাম মারুফ। সাংগঠনিক সম্পাদক পদের জন্য লড়ছেন নগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুনির আহমেদ সিদ্দিকী বাচ্চু, জেলা স্বেচ্ছাসেবকদলের সদ্য বিদায়ী কমিটির সভাপতি প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম, যশোর সদর উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী আজম ও সাবেক ছাত্রনেতা শহিদুল বারী রবু। বিএনপি নেতাকর্মীদের মতে, সভাপতি ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে, তবে ত্যাগী ও যোগ্য নেতারাই জয়ী হবেন বলে প্রত্যাশা।

সম্মেলনের দ্বিতীয় পর্বে দুপুর দুইটা থেকে বিকাল পাচটা পর্যন্ত যশোর মুন্সী মেহেরুল্লাহ ময়দানের আলমগীর সিদ্দিকী হলে নেতা নির্বাচনের ভোট গ্রহণ করা হয়। আট উপজেলার ১৬টি ইউনিটে ১৬১৬ ভোটার ভোট প্রদান করেন। দীর্ঘদিন পর অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনকে ঘিরে দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা গেছে।

যশোরে বিএনপির রাজনীতিতে এই সম্মেলন নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।