যশোরে জনসভায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন জনগণ মেনে নেবে না

- আপডেট সময় : ০১:২৫:০৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ ২৩ বার পড়া হয়েছে
দ্রুত জাতীয় নির্বাচন দিয়ে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের আহ্বান জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আপনারা স্থানীয় নির্বাচন আগে করতে চান। কিন্তু জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগে দিতে হবে। স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে করার চেষ্টা করা হলে এদেশের জনগণ মেনে নেবে না। স্থানীয় নির্বাচন আগে করলে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা গর্তের ভিতর থেকে বেরিয়ে আসবে। তারা পাড়া মহল্লায় সন্ত্রাস করবে। দেশে অরাজকতা তৈরি হবে। তাই দ্রুত জাতীয় সংসদ নির্বাচন দিন। জাতীয় নির্বাচন যত দ্রুত দিবেন, দেশে তত দ্রুত শান্তি ফিরে আসবে।
আজ (মঙ্গলবার) বিকেলে যশোর শহরের টাউন হল ময়দানের রওশন আলী মঞ্চে জেলা বিএনপি আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একথা বলেন। নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় রাখা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটানো ও দ্রুত নির্বাচনের রূপরেখা ঘোষণাসহ বিভিন্ন দাবিতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে এই জনসভার আয়োজন করা হয়।
বর্তমান সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে উদ্দেশ্য করে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, আপনাকে বিএনপি শ্রদ্ধা করে। দেশবাসী আপনাকে ভালোবাসে। আপনি আমাদের গর্ব। কিন্তু সেই সম্মানটুকু রক্ষার দায়িত্ব আপনারই। আপনি যদি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকারের নির্বাচন দিয়ে পতিত স্বৈরাচারের দোসরদের রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে চান তাহলে দেশবাসী তা কোনোভাবেই মেনে নেবে না। আপনাদের যদি ক্ষমতার লোভ পেয়ে বসে তাহলে রাজনৈতিক দল গঠন করে জনতার কাতারে নেমে এসে নির্বাচনে অংশ নিন। বিএনপি আপনাদের স্বাগত জানাবে। কারণ বিএনপি বহুদলীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে।
তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিব নিজের দল আওয়ামী লীগসহ দেশের সকল রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করে একদলীয় শাসন বাকশাল কায়েম করেছিল। ৭৫ পরবর্তী প্রেক্ষাপটের পরিবর্তন ঘটলে সিপাহী জনতার আন্দোলনে স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে দেশে একদলীয় শাসনের অবসান করে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আপনারাও ক্ষমতার চেয়ার ছেড়ে দিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুন। জনগণের রায় যদি আপনাদের পক্ষে যায় তাহলে আপনারাই দেশ পরিচালনা করবেন। তবুও আমরা বলবো জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করুন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা সবাই ভালো আছি, বলতে পারলে খুব ভালো লাগত। কিন্তু আমরা সবাই ভালো নেই। চাল, ডাল, তেল, লবনসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধিতে নাভিশ্বাস উঠেছে। আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলেও আমরা এখনও নিরাপদ নই। বিগত ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার আমলে বিএনপির ৬০ লাখ নেতাকর্মীর নামে মামলা হয়েছে। কয়েক হাজার নেতাকর্মী খুন ও ৭ শতাধিক গুমের শিকার হয়েছেন। যশোর জেলার অন্তত ৮৪ নেতাকর্মী প্রাণ হারিয়েছেন। হাসিনা আয়নাঘর করে সেখানে নেতাকর্মীদের আটকে রেখে নির্যাতন, খুন, গুম করেছে। জুলাই বিপ্লবের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতন হয়েছে। অনেক ছেলে শহিদ হয়েছে। জুলাই বিপ্লবের আকাক্সক্ষা ছিল আমরা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পাব। ভোটের অধিকার ফিরে পাব। সত্যিকারের গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ পাব। দেশ স্বাধীনের ৫৪ বছরেও সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়নি।
ছাত্রদের নতুন দল গঠন প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ক্ষমতায় থাকার খায়েশ থাকলে পদত্যাগ করুন। নতুন দল গঠন করছেন, এতে আমরা খুশি। ক্ষমতায় থেকে দল গঠন করবেন, এটা দেশের জনগণ মেনে নেবে না। ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে দল গঠন করুন। নির্বাচন দিন। জনগণের ভোট নিয়ে ক্ষমতায় বসেন। আমাদেরকে জনগণের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। আমাদের সাথে জনগণ আছে। আপনারা সংস্কারের কথা বলে নির্বাচন বিলম্বিত করবেন, জনগণ মানবে না।
সংস্কার প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, রাষ্ট্র সংস্কারে বিএনপি ৩১ দফা প্রস্তাব দিয়েছে। নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়ে ৩১ দফা বাস্তবায়ন করবে। অন্তর্বতীকালীন সরকার সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। বিএনপির ৩১ দফা প্রস্তাবের সঙ্গে সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের সুপারিশগুলোর অনেক মিল রয়েছে। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ছাড়া সংস্কার বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। সংস্কার বাস্তবায়ন করতে হলে নির্বাচিত সরকার দরকার। কিন্তু সংস্কারের নামে অন্য গন্ধ পাচ্ছি। ষড়যন্ত্র করে লাভ হবে না। এদেশে ওয়ান ইলেভেন সফল হয়নি।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমাদের নেত্রী চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে ছিলেন। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে আছেন। আন্দোলন, সংগ্রামে আমরা ঐক্যবদ্ধ ছিলাম। আমাদের দল ভাঙার বহু চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু সফল হয়নি।
আগামীতে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে খুলনা অঞ্চলের বন্ধ হওয়া পাটকল চালু এবং যশোরের ভবদহ অঞ্চলের জলাবদ্ধতা সমস্যার স্থায়ী সমাধানের আশ্বাস দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, গত ১৬ বছরে সকল রক্ষচক্ষুকে উপেক্ষা করে দেশের মানুষ বিএনপির পতাকাতলে যেমন ঐক্যবদ্ধ ছিল, আজও তেমনি আছে। হত্যা, খুন, গুমের রাজনীতি করে পতিত স্বৈরাচার হাসিনা বিএনপির নেতাকর্মীদের যেমন বিচ্ছিন্ন করতে পারেনি, তেমনি এই সরকার নির্বাচন বিলম্বিত করার মাধ্যমে যদি ভিন্ন কোনো চিন্তা-ভাবনা করে থাকে তা বিএনপির নেতাকর্মীরা কখনও বাস্তবায়িত করতে দেবে না। বিএনপি চায় এ দেশের মানুষের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে। তার জন্য যতদিন প্রয়োজন বিএনপির নেতাকর্মীরা ততদিন রাজপথেই থাকবে।
যশোর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক নার্গিস বেগমের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তৃতা করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা অমলেন্দু দাস অপু, মফিকুল হাসান তৃপ্তি, টিএস আইয়ুব, জেলা বিএনপি নেতা অ্যাড. সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, দেলোয়ার হোসেন খোকন, যশোর চেম্বারের সভাপতি মিজানুর রহমান খান, যশোর পৌরসভার সাবেক মেয়র মারুফুল ইসলাম মারুফ, বিএনপি নেতা আবুল হোসেন আজাদ, ফিরোজা বুলবুল কলি, সাবিরা নাজমুল মুন্নি, অ্যাড. শহীদ ইকবাল, ফারাজী মতিয়ার রহমান, এম এ সালাম, তানিয়া রহমান, সেলিম রেজা আওলিয়ার, নগর বিএনপির সভাপতি চৌধুরী রফিকুল ইসলাম মুল্লুক, সদর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আঞ্জারুল হক খোকন, যুবদলের আহ্বায়ক এম তমাল আহমেদ, সদস্য সচিব আনসারুল হক রানা, স্বেচ্ছাসেবক দলের মোস্তফা আমির ফয়সাল প্রমুখ।
সমাবেশ উপলক্ষে বেলা ১২টা থেকে খন্ড খন্ড মিছিল সহকারে শার্শা, ঝিকরগাছা, চৌগাছা, মনিরামপুর কেশবপুর, বাঘারপাড়া, অভয়নগর ও সদর উপজেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দলে দলে বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলে আসতে শুরু করেন। বেলা দুইটার আগেই বিশাল ময়দান কানায় কানায় ভরে যায়। ময়দানের বাইরের সড়কেও হাজার হাজার মানুষ দাঁড়িয়ে বক্তব্য শোনেন। সমাবেশ জনসভায় রূপ নেয়।