চলতি বছর ২৫ জন শিক্ষার্থী আক্রান্ত
যশোরে তরুণদের মধ্যে বাড়ছে এইডস সংক্রমণ
- আপডেট সময় : ০৭:০৪:৩০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৫ ২১২ বার পড়া হয়েছে
সীমান্তবর্তী জেলা যশোরে এইচআইভি/এইডস আক্রান্তের সংখ্যা উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে চলেছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই সংক্রমণের হার আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত ২৫ জন শিক্ষার্থী এইডসে আক্রান্ত হয়েছেন। আরও উদ্বেগের কথা হলো আক্রান্ত শিক্ষার্থীদের বয়স ১৭ থেকে ২৩ বছরের মধ্যে। এর বাইরে আরও ১৫ জনসহ অন্তত ৪০ জনের শরীরে বাসা বেঁধেছে এই মরণব্যাধি।
এই পরিসংখ্যান গত বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি, যা স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং অভিভাবকদের মধ্যে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। যশোরের সিভিল সার্জন ডা. মাসুদ রানা বলেন, এবছর আমরা ৪ হাজার সন্দেহভাজনকে স্ক্রিনিং করিয়েছে। কিন্তু এর বাইরে আরও রোগী রয়ে গেছে কিনা কিংবা তারা অন্যদের জন্য ঝুঁকি সৃষ্টি করছে কিনা, তা বোঝা খুব কঠিন।
যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতাল সূত্র জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত আক্রান্ত হওয়া ৪০ জনের মধ্যে ২৩ জন পুরুষ এবং ১৪ জন নারী। সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো, আক্রান্তদের মধ্যে ২৫ জনই শিক্ষার্থী। যেখানে গত বছর (২০২৪ সালে) মোট ২৫ জন আক্রান্তের মধ্যে শিক্ষার্থী ছিল ১২ জন। এ বছর মাত্র ছয় মাসেই সেই সংখ্যা দ্বিগুণ ছাড়িয়েছে, যা ভবিষ্যতের জন্য একটি বড় হুমকি হিসেবে দেখা হচ্ছে। এছাড়া, নতুন আক্রান্তদের মধ্যে ২৩ জন সমকামী বলে জানানো হয়। গতবছর যশোরে মোট ২৫ জন এইচআইভি/এইডসে আক্রান্ত হয়েছিলেন এবং তাদের মধ্যে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছিল।
বর্তমানে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল থেরাপি (এআরটি) সেন্টারে মোট ২২০ জন এইচআইভি/এইডস আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। এসব রোগীদের মধ্যে শুধু যশোর নয়, খুলনা বিভাগের অন্যান্য জেলার মানুষও রয়েছেন।
যশোরের জনসংখ্যা প্রায় ৩০ লাখ ৪৬ হাজার। সেই হিসাবে, প্রতি একলাখ মানুষের মধ্যে প্রায় একজন এইচআইভি/এইডস রোগী রয়েছেন।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সীমান্তবর্তী জেলা হওয়ায় এবং পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির কারণে এই রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। বিশেষ করে তরুণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংক্রমণের এই ঊর্ধ্বগতি সবাইকে চিন্তিত করে তুলেছে।
যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের এআরটি সেন্টারের মূল সমন্বয়কারী ডা. কানিজ ফাতেমা বলেন, তরুণদের মধ্যে এইচআইভি আক্রান্তের হার বর্তমানে উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। তাদের কৌতূহল এখন বিপরীত লিঙ্গের চেয়ে সহলিঙ্গের প্রতি বেশি দেখা যাচ্ছে, যা এক ধরনের সামাজিক চক্রান্তের ফল। ইন্টারনেটের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের প্রভাবেই এমন প্রবণতা বাড়ছে, বিশেষ করে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আমরা এ বিষয়টি স্পষ্টভাবে লক্ষ্য করছি।
সিভিল সার্জন ডা. মাসুদ রানা বলেন, অনিরাপদ রক্তদান, সেলুনে রেজার শেয়ার করা, ভ্রাম্যমাণ পতিতাদের মাধ্যমে সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে। এর বাইরে বেনাপোল সীমান্তে প্রতিদিন যেসব ট্রাক ড্রাইভার আসা-যাওয়া করেন, সংক্রমণের তারাও বড় একটা সোর্স হতে পারেন।
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য বিভাগের করণীয় কী জানতে চাইলে বলেন, আমরা সুযোগ পেলে কর্তৃপক্ষের নজরে এটা আনব।










