ঢাকা ১২:৩০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ঐতিহ্যবাহী গদখালী ফুলের বাজার মহাসড়ক থেকে স্থানান্তর

বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : ০১:৩৮:৪৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৫ ১০১ বার পড়া হয়েছে

গদখালি ফুল বাজারটি মহাসড়কের পাশ থেকে সরিয়ে ফুল বিপণন কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছে -কপোতাক্ষ

যশোরের ঐতিহ্যবাহী গদখালী ফুলের বাজার অবশেষে মহাসড়ক থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের পাশে দীর্ঘদিন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ফুল ব্যবসায়ীরা বেচাকেনা করতেন। এখন বাজারটি গদখালি ফুল বিপণন কেন্দ্রে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

ফুলচাষিদের ঝুঁকিপূর্ণ বাজার থেকে সরিয়ে নেয়ার পাশাপাশি জমি লিজ নেওয়াসহ বিভিন্ন সমস্যার সমাধানও করা হয়েছে। ঝিকরগাছা উপজেলা প্রশাসন ও কৃষি বিপণন অধিদপ্তর এ উদ্যোগ গ্রহণ করে।

কৃষি বিভাগের হিসাবে যশোরে প্রায় ৭ হাজার ফুলচাষি রয়েছেন। তারা অন্তত ১২শ’ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন প্রকার ফুল চাষ করেন। এর মধ্যে ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী, পানিসারা, নাভারণ, নির্বাসখোলার বিভিন্ন মাঠে প্রায় সাড়ে ৬শ’ হেক্টর জমিতে ফুল চাষ হয়ে থাকে। বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে রজনীগন্ধা, গোলাপ, জারবেরা, গ্লাডিওলাস, গাঁদা, চন্দ্রমল্লিকা, জিপসি, রডস্টিক, ক্যালেন্ডোলাসহ বিভিন্ন ধরনের ফুলের চাষ হচ্ছে।

দেশের ফুলের চাহিদার অন্তত ৭০ ভাগ সরবরাহ করেন যশোরের গদখালী অঞ্চলের ফুলচাষিরা।

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, তারা কয়েক যুগ ধরে গদখালি বাজারে ফুলের বেচাকেনা করছেন। তবে বাজারটি যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের দু’পাশে হওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় তাদের ফুলের বেচাকেনা করতে হয়। কাকডাকা ভোরে ফুলের বাজারে বেচাকেনা শুরু হওয়ায় তারা ভোরেই ফুল নিয়ে বাজারে চলে আসেন। একই সময়ে বেনাপোল থেকে পণ্যবাহী ট্রাকের চালকেরাও ঘুমঘুম চোখে দ্রুতবেগে মহাসড়ক দাপিয়ে ছুটে চলেন। এ কারণে এখানে একাধিকবার দুর্ঘটনা এবং প্রাণহানিও ঘটেছে। ফলে ফুলের বাজারটি মহাসড়ক থেকে একটু দূরে গদখালি ফুল বিপণন কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা কিশোর কুমার সাহা জানান, কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের উদ্যোগে ২০১৯ সালে গদখালী ফুলবাজারের পাশে গদখালী ফুল বিপণন কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। কিন্তু বিভিন্ন সমস্যা সংকটের কারণে ফুল বাজারটি চালু করা সম্ভব হয়নি। গত এক বছর বিভাগীয় উপপরিচালক, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় কিশোর কুমার স্থানীয় ফুলচাষী ও ব্যবসায়ীদের সাথে দফায় দফায় আলোচনা করে মার্কেট চালুর জন্য বেশ কয়েকটি প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করেন। এর মধ্যে ছিল, স্থান সংকট, যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না থাকা, ড্রেনেজ সিস্টেম, বিদ্যুত সংযোগ না থাকা ইত্যাদি।

কিশোর কুমার সাহা আরও জানান, সমস্যা চিহ্নিত হওয়ার পর ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সহযোগিতা নিয়ে সব সমস্যার সমাধান করা হয়েছে। ফুল বিপণন কেন্দ্রের সামনে দুই বিঘা জমি ইজারা নিয়েছে ফুলচাষি ও ব্যবসায়ী সমিতি। রাস্তা, ড্রেন, বিদ্যুত সমস্যার সমাধান করে দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। সবমিলিয়ে ফুল বিপণন কেন্দ্রে সম্পূর্ণ প্রস্তুত করায় ব্যবসায়ীদের সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

গদখালী ফুলচাষি ও ফুল ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আবু জাফর জানান, মহাসড়কের পাশ থেকে বাজারটি সরিয়ে নিয়ে যাওয়ায় চাষি ও ব্যবসায়ীরা এখন নিরাপদে বেচাকেনা করতে পারবেন। এছাড়া এখন ফুল বিপণন কেন্দ্রে বেচাকেনা করতে তেমন কোনো সমস্যা নেই। চাষি ও ব্যবসায়ীরা এখানে মানিয়ে নিতে পারলে তা সবার জন্যই ভালো হবে।

ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ভুপালী সরকার জানান, গদখালি ফুল বাজারটি মহাসড়কের পাশ থেকে সরিয়ে ফুল বিপণন কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এর আগে তারা বিপণন কেন্দ্রের সমস্যাগুলো সমাধানের চেষ্টা করেছেন। ফুলচাষি ও ফুল ব্যবসায়ী সমিতিকে সাথে নিয়ে চাষি ও ব্যবসায়ীদের সাথে আলোচনার ভিত্তিতে বাজারটি সরানো হয়েছে। এতে দেশের সর্ববৃহৎ এই ফুলের বাজারটির যেমন নিরাপদ হয়ে উঠবে, তেমনি ধীরে ধীরে এই বিস্তৃতিও ঘটবে। এজন্য তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

ঐতিহ্যবাহী গদখালী ফুলের বাজার মহাসড়ক থেকে স্থানান্তর

আপডেট সময় : ০১:৩৮:৪৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৫

যশোরের ঐতিহ্যবাহী গদখালী ফুলের বাজার অবশেষে মহাসড়ক থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের পাশে দীর্ঘদিন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ফুল ব্যবসায়ীরা বেচাকেনা করতেন। এখন বাজারটি গদখালি ফুল বিপণন কেন্দ্রে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

ফুলচাষিদের ঝুঁকিপূর্ণ বাজার থেকে সরিয়ে নেয়ার পাশাপাশি জমি লিজ নেওয়াসহ বিভিন্ন সমস্যার সমাধানও করা হয়েছে। ঝিকরগাছা উপজেলা প্রশাসন ও কৃষি বিপণন অধিদপ্তর এ উদ্যোগ গ্রহণ করে।

কৃষি বিভাগের হিসাবে যশোরে প্রায় ৭ হাজার ফুলচাষি রয়েছেন। তারা অন্তত ১২শ’ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন প্রকার ফুল চাষ করেন। এর মধ্যে ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী, পানিসারা, নাভারণ, নির্বাসখোলার বিভিন্ন মাঠে প্রায় সাড়ে ৬শ’ হেক্টর জমিতে ফুল চাষ হয়ে থাকে। বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে রজনীগন্ধা, গোলাপ, জারবেরা, গ্লাডিওলাস, গাঁদা, চন্দ্রমল্লিকা, জিপসি, রডস্টিক, ক্যালেন্ডোলাসহ বিভিন্ন ধরনের ফুলের চাষ হচ্ছে।

দেশের ফুলের চাহিদার অন্তত ৭০ ভাগ সরবরাহ করেন যশোরের গদখালী অঞ্চলের ফুলচাষিরা।

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, তারা কয়েক যুগ ধরে গদখালি বাজারে ফুলের বেচাকেনা করছেন। তবে বাজারটি যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের দু’পাশে হওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় তাদের ফুলের বেচাকেনা করতে হয়। কাকডাকা ভোরে ফুলের বাজারে বেচাকেনা শুরু হওয়ায় তারা ভোরেই ফুল নিয়ে বাজারে চলে আসেন। একই সময়ে বেনাপোল থেকে পণ্যবাহী ট্রাকের চালকেরাও ঘুমঘুম চোখে দ্রুতবেগে মহাসড়ক দাপিয়ে ছুটে চলেন। এ কারণে এখানে একাধিকবার দুর্ঘটনা এবং প্রাণহানিও ঘটেছে। ফলে ফুলের বাজারটি মহাসড়ক থেকে একটু দূরে গদখালি ফুল বিপণন কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা কিশোর কুমার সাহা জানান, কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের উদ্যোগে ২০১৯ সালে গদখালী ফুলবাজারের পাশে গদখালী ফুল বিপণন কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। কিন্তু বিভিন্ন সমস্যা সংকটের কারণে ফুল বাজারটি চালু করা সম্ভব হয়নি। গত এক বছর বিভাগীয় উপপরিচালক, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় কিশোর কুমার স্থানীয় ফুলচাষী ও ব্যবসায়ীদের সাথে দফায় দফায় আলোচনা করে মার্কেট চালুর জন্য বেশ কয়েকটি প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করেন। এর মধ্যে ছিল, স্থান সংকট, যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না থাকা, ড্রেনেজ সিস্টেম, বিদ্যুত সংযোগ না থাকা ইত্যাদি।

কিশোর কুমার সাহা আরও জানান, সমস্যা চিহ্নিত হওয়ার পর ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সহযোগিতা নিয়ে সব সমস্যার সমাধান করা হয়েছে। ফুল বিপণন কেন্দ্রের সামনে দুই বিঘা জমি ইজারা নিয়েছে ফুলচাষি ও ব্যবসায়ী সমিতি। রাস্তা, ড্রেন, বিদ্যুত সমস্যার সমাধান করে দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। সবমিলিয়ে ফুল বিপণন কেন্দ্রে সম্পূর্ণ প্রস্তুত করায় ব্যবসায়ীদের সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

গদখালী ফুলচাষি ও ফুল ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আবু জাফর জানান, মহাসড়কের পাশ থেকে বাজারটি সরিয়ে নিয়ে যাওয়ায় চাষি ও ব্যবসায়ীরা এখন নিরাপদে বেচাকেনা করতে পারবেন। এছাড়া এখন ফুল বিপণন কেন্দ্রে বেচাকেনা করতে তেমন কোনো সমস্যা নেই। চাষি ও ব্যবসায়ীরা এখানে মানিয়ে নিতে পারলে তা সবার জন্যই ভালো হবে।

ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ভুপালী সরকার জানান, গদখালি ফুল বাজারটি মহাসড়কের পাশ থেকে সরিয়ে ফুল বিপণন কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এর আগে তারা বিপণন কেন্দ্রের সমস্যাগুলো সমাধানের চেষ্টা করেছেন। ফুলচাষি ও ফুল ব্যবসায়ী সমিতিকে সাথে নিয়ে চাষি ও ব্যবসায়ীদের সাথে আলোচনার ভিত্তিতে বাজারটি সরানো হয়েছে। এতে দেশের সর্ববৃহৎ এই ফুলের বাজারটির যেমন নিরাপদ হয়ে উঠবে, তেমনি ধীরে ধীরে এই বিস্তৃতিও ঘটবে। এজন্য তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।