আয়নাবাজি সিনেমা স্টাইলে মামার বদলে কারাগারে ভাগনে!
- আপডেট সময় : ০৪:৫৮:০৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫ ৭৯ বার পড়া হয়েছে
চাঁদাবাজি, শ্লীলতাহানির মামলায় মামার পক্ষে আদালতে হাজিরা দিতে এসেছিলেন ভাগ্নে। এজলাসে বিচারকের বিভিন্ন জেরার উত্তরও দিয়েছিলেন তিনি। জেরা শেষে এজলাসে বিচারকের কাছে জামিন প্রার্থনা করলে বিচারক ভাগ্নেকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। প্রিজনস ভ্যানে কারাফটকে নিলে কারা অভ্যন্তরে আসামির নাম-ঠিকানা যাচাই-বাছাইকালে বেরিয়ে আসে আসামির আসল নাম ঠিকানা। দেশের স্বনামধন্য চলচিত্রকার অমিতাভ রেজা চৌধুরির নির্মিত ‘আয়নাবাজি’ সিনেমার মতো এই ঘটনা ঘটেছে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আসামিকে কারাগারে পাঠানো হয়।
আজ (বুধবার) যাচাই বাছাইশেষে এই আয়নাবাজি ধরা পড়ে।
কারাকতৃপক্ষ বলছে, মামার পক্ষে কারাগারে যাওয়া আসামি মো. শামীম আহম্মেদ (২৭) যশোর সদর উপজেলা ভেকুটিয়া গ্রামের জামশেদ আলীর ছেলে। শামীম তার আপন ছোট মামা হাসানের পক্ষে প্রক্সি দিতে কারাগারে গেছেন। হাসান বড় ভেকুটিয়া গ্রামের মন্টুর ছেলে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের ভারপ্রাপ্ত জেলার আবিদ আহম্মেদ।
যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ৮ নভেম্বর সদরের ভেকুটিয়া এলাকার বাসিন্দা রাকিবুল ইসলামের বাড়িতে চাঁদাবাজি করতে আসেন স্থানীয় নিশানুর রহমান অন্তরের নেতৃত্বে ৭ থেকে ৮ জন। এসময় রাকিবুলের কাছে পাঁচ লক্ষ চাঁদা দাবি করেন। একপর্যায়ে তাদের উপর হামলা ও রাকিবুলের স্ত্রীর উপর শ্লীলতাহানির ঘটান তারা। ঘটনার সময় তারা নগদ ও বিকাশের মাধ্যমে ৫৫ হাজার টাকা নিয়ে পালিয়ে যান। পরে ভুক্তভোগী রাকিবুল চাঁদাবাজি শ্লীলতাহানি, হামলার অভিযোগে ২০২৪ সালের ৯ নভেম্বর সাতজনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন। এই মামলার ৫ নম্বর আসামী হাসান। বিভিন্ন সময় আসামিরা আদালতে হাজিরা দিয়ে জামিনে রয়েছেন।
গতকাল (মঙ্গলবার) দুপুরে অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল আদালতে মামলার সবাই হাজিরা দিতে আসেন। এই মামলায় আসামি হাসানের বিরুদ্ধে ৩-৪ বার আদালতে হাজিরাও দেন হাসানের ভাগনে শামীম। মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) শামীম আদালতে হাজিরা দিতে গেলে অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত তাকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন। ফলে আসামি হাসানের পরিবর্তে কারাগারে প্রেরণ করা হয় শামীমকে।
এদিকে, শামীম কারাগারে যাওয়ার পর আদালত হতে প্রাপ্ত তথ্য এবং আসামির নাম, পিতার নাম, ঠিকানা যাচাইয়ের সময় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তার কথাবার্তা অসংলগ্ন হওয়ায় সন্দেহের সৃষ্টি হয়। ফলে কারাগারের সিস্টেমের মাধ্যমে তার ফিঙ্গার প্রিন্টে প্রকৃত নাম মো. শামীম আহম্মেদ শনাক্ত হয়।
কারা সূত্র আরও জানিয়েছে, আসামি হাসানের পরিবর্তে কারাগারে যাওয়া শামীম জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে হাসান তার আপন ছোট মামা। মামার পরিবর্তে সে ৩-৪ বার আদালতে হাজিরাও দিয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর কারা কর্তৃপক্ষ বিষয়টি প্রতিবেদন আকারে আদালতে প্রেরণ করেছে। এখন আদালতের নির্দেশে শামীমের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের এবং মূল আসামি হাসানের বিরুদ্ধেও গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হবে বলে জানান যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের ভারপ্রাপ্ত জেলার আবিদ আহম্মেদ। তবে বিষয়টি তদন্তাধীন বলে এর বেশি জানাতে চাননি তিনি।
তবে কারাসূত্রে বলছে, আসামীর আইনজীবী, সংশ্লিষ্ঠ আদালতের বেঞ্চ সহকারীর সহযোগিতায় এ ধরনের জালিয়াতি হতে পারে।
এ বিষয়ে আসামীর আইনজীবী সাজ্জাদ মোস্তফা রাজা বলেন, বিষয়টি শুনেছি। অনেক সময় মহুরিদের ম্যানেজ করে আসামীর পক্ষে কাউকে হাজিরা দিয়ে দিতে সহায়তা করতে পারে। বিষয়টি খোঁজ নিচ্ছি। কিভাবে এটি হলো।










