অভিযানে ফেরার পথে দুদকের কর্মকর্তারা অবরুদ্ধ
অবশেষে বেনাপোল কাস্টমসের সেই কর্মকর্তা আটক
- আপডেট সময় : ০৫:৪৫:১৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ অক্টোবর ২০২৫ ১৯৯ বার পড়া হয়েছে
দুই লাখ ৭৬ হাজার টাকা ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে বেনাপোল কাস্টমস হাউজের সেই আলোচিত রাজস্ব কর্মকর্তা শামীমা আক্তার ও তার সহযোগী হাসিব উদ্দীনকে আটক করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদক। সোমবার রাতে কাস্টমস হাউজে অভিযানে হাসিবুর রহমানকে টাকাসহ আটক করে দুদক যশোর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সদস্যরা।
প্রাথমিক তদন্ত শেষে সহকারী পরিচালক আল আমীন মামলা করার পর আজ (মঙ্গলবার) দুপুরে রাজস্ব কর্মকর্তা শামীমা আক্তারকেও গ্রেফতার করা হয়। পরে ঘুষ গ্রহণের মামলায় বিকেলে যশোরের সিনিয়র স্পেশাল জেলা জজ আদালতে হাজির করা হলে দায়িত্বপ্রাপ্ত বিচারক সালেহুজ্জামান দু’জনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এদিকে, রাজস্ব কর্মকর্তা শামীমার ঘুষ নেওয়ার প্রমাণ পাওয়ার পরও দুদক অভিযানে তাকে আটক না করায় কাস্টম হাউজে স্থানীয়দের বাধার মুখে পড়েন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কর্মকর্তারা। এ সময় তাদের গাড়িটি প্রায় ৩০ মিনিট আটকে রাখা হয়। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনলে দুদকের কর্মকর্তারা স্থান ত্যাগ করেন।
দুদকের মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, বেনাপোল কাস্টম হাউজের কিছু কর্মকর্তা আমদানি পণ্যে সঠিকভাবে শুল্কায়ন করছেন না, ঘুষ নিয়ে আমদানি পণ্যে শুল্কায়ন করা হয়, এমন অভিযোগের ভিত্তিতে সোমবার বিকেলে দুদক যশোর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের একটি দল বেনাপোল কাস্টম হাউজে অভিযান চালায়।
দুদক কর্মকর্তারা বিকেল চারটার দিকে বেনাপোল কাস্টম হাউজের প্রধান ফটক থেকে হাসিবুর রহমান নামের এক ব্যক্তিকে আটক করেন। এ সময় তার কাছ থেকে ২ লাখ ৭৬ হাজার টাকা জব্দ করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে হাসিবুর রহমান ঐ টাকা বেনাপোল কাস্টম হাউজের রাজস্ব কর্মকর্তা শামীমা আক্তারের ঘুষের বলে জানান। তাকে নিয়ে কাস্টম হাউজের চতুর্থ তলায় শামীমা আক্তারের কক্ষে যান দুদক কর্মকর্তারা।
শামীমা আক্তারকে ঐ টাকা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি দুদককে জানান যে, হাসিবুর রহমানের সাথে তার নিয়মিত যোগাযোগ হয় এবং হাসিবুর রহমানকে টাকা তার দপ্তরে আনতে বলেছেন। পরবর্তীতে টিম কর্তৃক হাসিবুর রহমানের কাছ থেকে উদ্ধার করা দুই লাখ ৭৬ হাজার টাকা জব্দ তালিকা মূলে জব্দ করা হয়।
যশোর থেকে মামলার এজাহারভুক্ত আসামি রাজস্ব কর্মকর্তা শামীমা আক্তারকে গ্রেপ্তার করে দুদকের সদস্যরা।
এদিকে, বেনাপোল কাস্টম হাউজে অভিযানে গিয়ে বাধার মুখে পড়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কর্মকর্তারা। এ সময় তাদের গাড়িটি প্রায় ৩০ মিনিট আটকে রাখা হয়। সোমবার রাতে বেনাপোল কাস্টম হাউজ চত্বরে এ ঘটনা ঘটে।
সূত্র জানায়, জব্দ করা টাকার নম্বর মিলিয়ে তালিকাবদ্ধ করতে রাত সাড়ে আটটা বেজে যায়। এ সময় দুদক কর্মকর্তারা রাজস্ব কর্মকর্তা শামীমা আক্তারের কাছ থেকে মুচলেকা নিয়ে তাকে কাস্টমস কমিশনারের জিম্মায় রেখে বেরিয়ে কাস্টম হাউসের প্রধান ফটকের সামনে রাখা গাড়িতে তারা ওঠেন।
এ সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে অসদাচরণ এবং দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাকে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ তুলে শতাধিক লোক গাড়িটি আটকে রাখেন। এ সময় তারা বিভিন্ন শ্লোগান দিতে থাকেন। এতে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন কর্মকর্তারা।
খবর পেয়ে প্রায় ৩০ মিনিট পর রাত সোয়া নয়টার দিকে বেনাপোল বন্দর থানা থেকে পুলিশ কাস্টম হাউজে গিয়ে কর্মকর্তাদের উদ্ধার করে। এরপর পুলিশি প্রহরায় গাড়িটি যশোরের উদ্দেশ্যে বেনাপোল কাস্টম হাউজ ছেড়ে যায়।
এ ঘটনার কয়েকটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, কাস্টমস কমিশনারের কার্যালয়ের সামনে অপেক্ষমান সাংবাদিকদের ব্রিফিং করছেন দুদক যশোর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আল-আমিন।
ব্রিফিংয়ের শেষ পর্যায়ে উপস্থিত সাংবাদিকেরা তাকে ঘিরে ‘দুর্নীতিবাজ’ ও ‘ঘুষখোর’ বলে শ্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় তাকে বিমর্ষ অবস্থায় দ্রুত সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে যেতে দেখা যায়।
অপর একটি ভিডিওতে দেখা যায়, বেনাপোল কাস্টম হাউজের মূল ফটকের সামনে দুদকের গাড়িটি আটকে রাখা হয়েছে। গাড়ির মধ্যে বসে আছেন দুদকের কর্মকর্তারা। অবরোধকারীরা গাড়িটির চারপাশে অবস্থান করছেন। এ সময় দুদক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তাদের বিভিন্ন শ্লোগান দিতে দেখা যায়।
দুদক যশোর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. সালাহউদ্দীন বলেন, রাজস্ব কর্মকর্তা শামীমা আক্তারের সহযোগী হাসিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে টাকার উৎস যাচাই বাছাই শেষে সহকারী পরিচালক আল আমীন মামলা করলে সেই মামলার আসামী রাজস্ব কর্মকর্তা শামীমা আক্তারকেও মঙ্গলবার যশোর শহর থেকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের দুজনকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। জব্দ করা টাকা আদালতের অনুমতি নিয়ে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেওয়া হবে।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলেন, দুদকের এমন অভিযান আমাদের নতুন করে আশাবাদী করেছে। আগে ফাইল ছাড়াতে ঘুষ দিতেই হতো, এখন মনে হচ্ছে পরিবর্তনের সময় এসেছে। দেশের সবচেয়ে বড় স্থলবন্দর বেনাপোল কাস্টমস হাউজ দীর্ঘদিন ধরেই ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগে আলোচনায়। চলমান দুদক অভিযানকে অনেকে ‘বেনাপোলকে ঘুষমুক্ত করার প্রথম পদক্ষেপ’ হিসেবে দেখছেন।










