ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে চোরাই গাড়ি ক্রয়-বিক্রয় সিন্ডিকেট
লক্ষীপুর থেকে চোরাই ট্রাক যশোরে উদ্ধার

- আপডেট সময় : ০১:৪১:৪৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩ মার্চ ২০২৫ ১৯ বার পড়া হয়েছে
যশোরে ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে চোরাই গাড়ি ক্রয়-বিক্রয় সিন্ডিকেটের সদস্যরা। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে চোরাই বাস, ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, মিনিবাস, মাইক্রো, প্রাইভেটকারসহ হরেক রকমের গাড়ি চোরাইপথে পৌঁছে যাচ্ছে এই সিন্ডিকেটের হাতে। তারপর সিন্ডিকেট সদস্যরা সেসব গাড়ির বডি ও ইঞ্জিন খুলে কেটে কেটে তা বিক্রি করছে ভাংড়ি বা যন্ত্রাংশ হিসেবে। দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের সাথে সাথে এই সিন্ডিকেটের সদস্যরা গা ঢাকা দিলেও বর্তমানে তারা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। গত ২ মার্চ গোপন তথ্যের ভিত্তিতে লক্ষীপুর থেকে চুরি যাওয়া একটি ট্রাকের ইঞ্জিন ও বডির খন্ড খন্ড অংশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
সূত্র জানিয়েছে, লক্ষীপুর থেকে চুরি করে আনা একটি ট্রাকের খোঁজে পরিচালিত অভিযানে বকচর থেকে খন্ড খন্ড অংশ উদ্ধার হয়েছে। ১ ও ২ মার্চ লক্ষীপুর সদর থানা পুলিশ ও যশোর কোতোয়ালি থানা পুলিশের টিম যৌথ অভিযান চালিয়ে ট্রাকটি কাটা অবস্থায় বকচর বকুলতার রাজকুমারের পুরাতন পার্টসের দোকানের সামনে থেকে উদ্ধার করে। আর প্রতিনিয়তই কয়েকজন গ্যারেজ মালিক এবং চোরাই গাড়ি বেচাকেনা করা লোকজনকে সাথে নিয়ে অবাধে এ কারবার চালিয়ে যাচ্ছে বলেও অভিযানিক টিমের দাবি। অভিযানের খবর পেয়ে চোরাই সিন্ডিকেট সদস্য রাজকুমার পালিয়েছে। এদিকে স্থানীয়দের অভিযোগ, পুরাতন লোহা ও মোটর পার্টস ব্যবসায়ী সমিতির বর্তমান কমিটির কয়েকজন সরাসরি এই চোরাই ও বিকিকিনি সিন্ডিকেটে জড়িত।
সূত্র বলছে, লক্ষীপুর জেলার সদর উপজেলা এলাকার মামুন আহমেদ নামে এক ট্রাক ব্যবসায়ীর একটি ট্রাক চুরি হয় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি। এ নিয়ে ১ মার্চ লক্ষীপুর থানায় অজ্ঞাত আসামি করে মামলা হয়। লক্ষীপুর থানার এসআই হুমায়ুন কবীর সোর্সের মাধ্যমে ও গোয়েন্দা তথ্যে জানতে পারেন চুরি হওয়া ট্রাকটি যশোরের বকচরে চোরাই ট্রাক বিকিকিনি ও কাটা সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ওই তথ্যের সূত্র ধরে ১ মার্চ রাতে যশোর কোতোয়ালি থানাকে অবহিত করে এবং এসআই আলমগীর হোসেনকে সাথে নিয়ে যৌথ অভিযান পরিচালনা করে পুলিশ। এরপর বকচরের চৌধুরী বাড়ির অদুরে বকুলতলায় রাজকুমারের দোকানের সামনে ওই চোরাই ট্রাকের কয়েক খন্ড পাওয়া যায়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে খন্ড কেবিন ফেলে পালিয়ে যায় রাজকুমারসহ চক্রের লোকজন। আর অদুরে পূজা মন্ডপের পাশে ওই চোরাই ট্রাকের চ্যাসিসসহ অন্যান্য যন্ত্রাংশ পাওয়া যায়।
এদিকে পুরিশের গোয়েন্দা শাখা ও স্থানীয় একাধিক সূত্র থেকে তথ্য মিলেছে, বছর কয়েক আগে বকচর হুঁশতলা এলাকার ফারুক, ইঞ্জিন মিস্ত্রি ফারুক, মাসুদ, মুড়লি এলাকার কালু ড্রাইভার, চৌধুরী পাড়া এলাকার কানা ইজাজ, গোপালগঞ্জ জেলার কাঠির বাজার এলাকার মাহফুজ শেখ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বাস, ট্রাক, পিকআপ, প্রাইভেট কার ও কাভার্ড ভ্যান চুরি করে যশোরে আনতেন। আর এগুলো দেয়া হতো শহরের বকচর এলাকার কয়েকটি চিহ্নিত গ্যারেজে। যশোর ছাড়াও বিভিন্ন শহরে গ্যারেজ মালিকের সাথে ছিল এদের সুসম্পর্ক। অন্য জেলা থেকে চুরি করে আনা ট্রাক যশোরে এনে গ্যারেজে ফেলে খন্ডখন্ড করে তা বিক্রি করত ওই চক্রটি।
পুলিশের অভিযান ও তদন্ত থেকে তথ্য মিলেছে, চোরাই ও পুরানো গাড়ি বিকিকিনি ও নয়া সিন্ডিকেটের সদস্যদের মধ্যে সমিতির সদস্যদের কেউ কেউ রয়েছেন। নেপথ্যে থেকে অর্থলগ্নি করে চোরাই ও পুরোনো গাড়ি বিকিকিনি কর্মকান্ড পরিচালনা করছেন কয়েকজন।
এ ব্যাপারে যশোর কেতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার ইনচার্জ কাজী বাবুল হোসেন জানিয়েছেন, বকচর এলাকায় এ ধরনের কয়েকটি সিন্ডিকেট রয়েছে, যার তথ্য তাদের কাছেও এসেছে। লক্ষীপুরের একটি ট্রাক যশোরের একটি সিন্ডিকেট থেকে উদ্ধার হয়েছে রোববার ভোররাতে। এ ব্যাপারে আরো খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে। পুলিশ সম্প্রতি অভিযান চালিয়ে আরও বেশ কয়েকটি চোরাই গাড়ি উদ্ধারও করেছে বলে জানান তিনি।
এ ব্যাপারে অভিযানিক দারোগা লক্ষীপুর থানার এসআই হুমায়ুন কবীর জানিয়েছেন, চোরাই গাড়ি বিকিকিনি সিন্ডিকেট গাড়ি কেটে আমুল পরিবর্তন করে। যশোরের বকচরে একটি শক্তিশালী গাড়ি চোরচক্রের সিন্ডিকেট রয়েছে দীর্ঘদিনের। তিনি যে চোরাই গাড়িটি উদ্ধার করেছেন তাতে সম্পৃক্ত বকচরের রাজকুমার পলাতক। তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। সম্পৃক্ত গ্যারেজ ও অভিযুক্তদের ব্যাপারেও খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে।
এ ব্যাপারে যশোর কেতোয়ালি থানার এসআই আলমগীর হোসেন জানিয়েছেন, অভিযানে তিনি লক্ষীপুরের পুলিশ টিমকে সহায়তা করেছেন মাত্র। একটি চক্র ভোল পাল্টে চোরাই গাড়ি বিকিকিনি করে চলেছে, সে ব্যাপারে নজরদারি চলছে। তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে।