ঢাকা ০৮:২৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১৫ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মাইকে ঘোষণা দিয়ে সংঘর্ষের জের

আব্দুলপুর গ্রামে বাড়িঘর ভাংচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ

প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় : ০২:৩৩:৩১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ ২৪ বার পড়া হয়েছে

হৈবতপুর ইউনিয়নের আব্দুলপুর গ্রামে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে -কপোতাক্ষ

মাইকে ঘোষণা দিয়ে যশোর সদরের হৈবতপুর ইউনিয়নে দু’পক্ষের সংঘর্ষের পর বাড়িঘর ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। আজ (বুধবার) সদর উপজেলার আব্দুলপুর গ্রামে এই হামলা, ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে ও পরিস্থিতি শান্ত করে।

এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত অপরাধীদের আটকে গোটা এলাকাজুড়ে যৌথ বাহিনীর সদস্যরা সাড়াশি অভিযান শুরু করেছে। অভিযানে আটক এড়াতে ও পুনরায় হামলার ভয়ে দু’গ্রামের শত শত পুরুষ ও নারীরা ঘর ছেড়ে অন্য জায়গায় চলে গেছে। তবে পুলিশ ও সেনাবাহিনী এলাকার শান্তিপ্রিয় মানুষকে নিরাপদে থাকার পাশাপশি সবাইকে শান্ত থাকার অনুরোধ জানিয়েছে।

এর আগে মঙ্গলবার মাইকে ঘোষণা দিয়ে হৈবতপুর ইউনিয়নের বড় হৈবতপুর ও চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের আব্দুলপুর গ্রামের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ঐ সংঘর্ষের সূত্র ধরে বুধবার এই তাণ্ডব চলেছে।

জানা যায়, চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের আব্দুলপুর ও হৈবতপুর ইউনিয়নের বড় হৈবতপুর গ্রামবাসীর মধ্যে জমিতে সেচের পানি দেওয়া নিয়ে মঙ্গলবার কথা কাটাকাটি হয়। এ সময় আব্দুলপুর গ্রামের ইউপি সদস্য আনিসুর রহমান গ্রামের মাইকে ঘোষণা দিয়ে জোটবদ্ধ হয়ে হৈবতপুর গ্রামবাসীর উপর হামলা চালায়। হামলার নেতৃত্ব দেন আনিসুর রহমান মেম্বার। তার নেতৃত্বে হামলা চালান শফিক, তৌহিদ এবং রমজানসহ স্থানীয় ৫০-৬০ জন গ্রামবাসী। এসময় গুরুতর জখম হন হৈবতপুর গ্রামের ৪ জন বিএনপি ও যুবদলের নেতা।

আহতরা হলেন : হৈবতপুর ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি রাজু (৪৪), ৪ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সম্পাদক শামীম (৩৬), বিএনপি কর্মী জিয়া (৩৫) এবং ৪ নং ওয়ার্ড যুবদলের কোষাধ্যক্ষ পাপ্পু। এ ঘটনার পর মঙ্গলবার রাতে আব্দুলপুর গ্রামে অতর্কিত হামলা চালায় দুবৃর্ত্তরা। এ সময় তারা আনিস মেম্বার ও সাবেক ইউপি সদস্য মহাসিনসহ চারজনের বাড়িতে ব্যাপক ভাংচুর ও লুটপাট করে।

এদিকে, ঐ ঘটনার জের ধরে বুধবার হৈবতপুর ইউনিয়নের বড় হৈবতপুরসহ ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের ১৫০-২০০ লোক জোটবদ্ধ হয়ে পুনারায় হামলা চালায় আব্দুলপুর গ্রামের বুড়ি ভৈরব নদের পাড়ে অবস্থিত কয়েকটি বাড়িতে। হামলাকারীরা আব্দুলপুর গ্রামের রমজান আলী, লাল্টু, মিন্টু, ইসরাফিলের বাড়িতে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর ও লুটপাট করে। পরে হামলাকারীরা তাদের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়।

গ্রামবাসী জানিয়েছেন, হামলাকারীরা গরু, ছাগল, হাঁস মুরগি, নগদ টাকা লুট করে নিয়ে গেছে। খবর পেয়েই পুলিশ, সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে হাজির হয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন ও পরিস্থিতি শান্ত করে।

ভুক্তভোগী পরিবারের দাবি, রাজনৈতিক কারণে নিরীহ মানুষের বাড়ি ঘরে আগুন ও হামলা চালিয়েছে একটি পক্ষ। আগুনে অনেকের বাড়িঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আগুনে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। গোটা এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। হামলা মামলার ভয়ে আব্দুলপুর ও হৈবতপুর গ্রামের অনেকেই বাড়ি ঘর রেখে পালিয়ে গেছে।

চুড়ামনকাটি ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাস্টার মিজানুর রহমান উভয় গ্রামবাসীকে শান্ত থাকার জন্য অনুরোধ করেছেন। বিষয়টি নিয়ে কেউ সাধারণ মানুষের উপর যেন অন্যায়ভাবে হামলা না করে সেজন্য তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের সজাগ থাকারও অনুরোধ জানিয়েছেন।

যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী বাবুল বলেন, পুলিশ ঘটনাস্থলে রয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ইতিমধ্যে অপরাধীদের আটকে যৌথবাহিনীর অভিযান শুরু হয়েছে। তিনি এলাকায় শান্তি বজায় রাখতে সবাইকে শান্ত থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন। গ্রামটিতে পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

মাইকে ঘোষণা দিয়ে সংঘর্ষের জের

আব্দুলপুর গ্রামে বাড়িঘর ভাংচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ

আপডেট সময় : ০২:৩৩:৩১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

মাইকে ঘোষণা দিয়ে যশোর সদরের হৈবতপুর ইউনিয়নে দু’পক্ষের সংঘর্ষের পর বাড়িঘর ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। আজ (বুধবার) সদর উপজেলার আব্দুলপুর গ্রামে এই হামলা, ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে ও পরিস্থিতি শান্ত করে।

এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত অপরাধীদের আটকে গোটা এলাকাজুড়ে যৌথ বাহিনীর সদস্যরা সাড়াশি অভিযান শুরু করেছে। অভিযানে আটক এড়াতে ও পুনরায় হামলার ভয়ে দু’গ্রামের শত শত পুরুষ ও নারীরা ঘর ছেড়ে অন্য জায়গায় চলে গেছে। তবে পুলিশ ও সেনাবাহিনী এলাকার শান্তিপ্রিয় মানুষকে নিরাপদে থাকার পাশাপশি সবাইকে শান্ত থাকার অনুরোধ জানিয়েছে।

এর আগে মঙ্গলবার মাইকে ঘোষণা দিয়ে হৈবতপুর ইউনিয়নের বড় হৈবতপুর ও চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের আব্দুলপুর গ্রামের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ঐ সংঘর্ষের সূত্র ধরে বুধবার এই তাণ্ডব চলেছে।

জানা যায়, চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের আব্দুলপুর ও হৈবতপুর ইউনিয়নের বড় হৈবতপুর গ্রামবাসীর মধ্যে জমিতে সেচের পানি দেওয়া নিয়ে মঙ্গলবার কথা কাটাকাটি হয়। এ সময় আব্দুলপুর গ্রামের ইউপি সদস্য আনিসুর রহমান গ্রামের মাইকে ঘোষণা দিয়ে জোটবদ্ধ হয়ে হৈবতপুর গ্রামবাসীর উপর হামলা চালায়। হামলার নেতৃত্ব দেন আনিসুর রহমান মেম্বার। তার নেতৃত্বে হামলা চালান শফিক, তৌহিদ এবং রমজানসহ স্থানীয় ৫০-৬০ জন গ্রামবাসী। এসময় গুরুতর জখম হন হৈবতপুর গ্রামের ৪ জন বিএনপি ও যুবদলের নেতা।

আহতরা হলেন : হৈবতপুর ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি রাজু (৪৪), ৪ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সম্পাদক শামীম (৩৬), বিএনপি কর্মী জিয়া (৩৫) এবং ৪ নং ওয়ার্ড যুবদলের কোষাধ্যক্ষ পাপ্পু। এ ঘটনার পর মঙ্গলবার রাতে আব্দুলপুর গ্রামে অতর্কিত হামলা চালায় দুবৃর্ত্তরা। এ সময় তারা আনিস মেম্বার ও সাবেক ইউপি সদস্য মহাসিনসহ চারজনের বাড়িতে ব্যাপক ভাংচুর ও লুটপাট করে।

এদিকে, ঐ ঘটনার জের ধরে বুধবার হৈবতপুর ইউনিয়নের বড় হৈবতপুরসহ ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের ১৫০-২০০ লোক জোটবদ্ধ হয়ে পুনারায় হামলা চালায় আব্দুলপুর গ্রামের বুড়ি ভৈরব নদের পাড়ে অবস্থিত কয়েকটি বাড়িতে। হামলাকারীরা আব্দুলপুর গ্রামের রমজান আলী, লাল্টু, মিন্টু, ইসরাফিলের বাড়িতে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর ও লুটপাট করে। পরে হামলাকারীরা তাদের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়।

গ্রামবাসী জানিয়েছেন, হামলাকারীরা গরু, ছাগল, হাঁস মুরগি, নগদ টাকা লুট করে নিয়ে গেছে। খবর পেয়েই পুলিশ, সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে হাজির হয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন ও পরিস্থিতি শান্ত করে।

ভুক্তভোগী পরিবারের দাবি, রাজনৈতিক কারণে নিরীহ মানুষের বাড়ি ঘরে আগুন ও হামলা চালিয়েছে একটি পক্ষ। আগুনে অনেকের বাড়িঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আগুনে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। গোটা এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। হামলা মামলার ভয়ে আব্দুলপুর ও হৈবতপুর গ্রামের অনেকেই বাড়ি ঘর রেখে পালিয়ে গেছে।

চুড়ামনকাটি ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাস্টার মিজানুর রহমান উভয় গ্রামবাসীকে শান্ত থাকার জন্য অনুরোধ করেছেন। বিষয়টি নিয়ে কেউ সাধারণ মানুষের উপর যেন অন্যায়ভাবে হামলা না করে সেজন্য তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের সজাগ থাকারও অনুরোধ জানিয়েছেন।

যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী বাবুল বলেন, পুলিশ ঘটনাস্থলে রয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ইতিমধ্যে অপরাধীদের আটকে যৌথবাহিনীর অভিযান শুরু হয়েছে। তিনি এলাকায় শান্তি বজায় রাখতে সবাইকে শান্ত থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন। গ্রামটিতে পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে।