ঢাকা ০৭:১৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৬ মার্চ ২০২৫, ১২ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
সেনাবাহিনীকে জনগণের মুখোমুখি করার চক্রান্ত শুরু হয়েছে যশোরের শহীদ পরিবারের মাঝে ঈদ উপহার সামগ্রি বিতরণ যশোরে অল্পের জন্য দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা যশোরে শিশু ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে যুবককে গণপিটুনি গাছের সঙ্গে মোটরসাইকেলের ধাক্কায় প্রাণ গেল কলেজছাত্রের গাজায় নৃশংস হত্যার প্রতিবাদে যশোরে সাংস্কৃতিক সংগঠনের বিক্ষোভ ফিলিস্তিনে বর্বর হামলার প্রতিবাদে যশোরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ যশোরের চিহ্নিত সন্ত্রাসী হত্যাসহ ২৪ মামলার আসামি ভাইপো রাকিব আটক যশোরে চাচাতো বোনকে ধর্ষণের দায়ে যুবকের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড আত্মসাতকৃত তিন হাজার বস্তা সরকারি ইউরিয়া সার উদ্ধার, গ্রেফতার তিন

‘পাকা ধান না কেটে পুলিশের ভয়ে বাগানে বাগানে রাত কাটিয়েছি’

যশোরে ব্যতিক্রমী ও বর্ণাঢ্য আয়োজনে কৃষক সমাবেশ

প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় : ০২:১৪:১৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ ৩৭ বার পড়া হয়েছে

যশোরে ব্যতিক্রমী ও বর্ণাঢ্য আয়োজনে কৃষক সমাবেশ করেছে কৃষক দল। মঙ্গলবার বিকালে যশোর সদরের চুড়ামনকাটিতে ইউনিয়ন কৃষকদল এই কৃষক সমাবেশের আয়োজন করে। সমাবেশকে ঘিরে সমাবেশ স্থলে ঢল নামে হাজারো কৃষাণ-কৃষাণী, জনতার। কেউ গ্রামের মেঠো পথ দিয়ে সুসজ্জিত গরুর গাড়ি নিয়ে, কেউবা জমির আইল বেয়ে লাঙল, জোয়াল, মাথাল, কাঁচি নিয়ে যোগ দেন সমাবেশে। সমাবেশে বিগত দিনের নির্যাতন-বঞ্চনার অভিযোগ করেন কৃষকেরা।

সমাবেশে বিগত সরকারের সময়ে নির্যাতিত কৃষক মহাসিন আলম নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, ‘মিথ্যা স্বপ্ন দেখিয়ে আওয়ামী লীগ কৃষকদের ভোট নিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলো। ক্ষমতায় এসে কৃষকের উন্নয়নে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিলেও তারা কৃষককে মনে রাখেনি। গায়ে গতরে খেটেও কৃষকের ভাগ্য উন্নয়ন হয়নি। মোটাতাজা হয়েছে আওয়ামী লীগের নেতারা। নিজেদের উৎপাদিত ধান পাট, শাক সবজির ন্যায্য দাম পায়নি। ২০ টাকার সার ৩০ টাকায় বিক্রি করেছে। সার পেট্রোলের দাম বাড়িয়ে উৎপাদন খরচ দ্বিগুণ করেছে। এই কৃষকের ভোটে এমপি মন্ত্রী হয়ে নেতারা মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাদের বাড়িতে ঘুমোতে দেয়নি। পাকা ধান না কেটে পুলিশের ভয়ে বাগানে বাগানে রাত কাটিয়েছি।’

চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের কমলাপুর গ্রামের এই কৃষক মহাসিন আলমের ভাষ্য, বিগত আওয়ামী লীগের সরকারের সময়ে নাশকতা মামলায় তিনি কারাবরণ ও দীর্ঘদিন আটকের ভয়ে আত্মগোপনে থেকেছেন। তার মতো অনেকেই বিগত সময়ে কৃষকের উপর নির্যাতন, বঞ্চনা আর ফসল উৎপাদন করেও ন্যায্য নাম না পাওয়ার ক্ষোভ প্রকাশ করেন। একইসাথে কৃষকদের ভাগ্য উন্নয়নে নানা প্রস্তাবনা তুলে ধরেন।

কৃষক জনগোষ্ঠীকে সংগঠিত করার লক্ষে এই কৃষক সমাবেশের আয়োজন করে চুড়ামনকাটি ইউনিয়ন কৃষকদল। কৃষকের পতিত ধান ক্ষেতে অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত।

সমাবেশে বেশ কয়েকজন কৃষকের অনুভূতি ও প্রস্তাবনা শুনে বক্তব্য রাখেন প্রধান অতিথি বিএনপির বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত। তিনি বলেন, ‘দেশে একমাত্র বিএনপি কৃষকদের নিয়ে ভাবে। বিএনপি ক্ষমতায় এলে জাতীয় বাজেটের ৮ শতাংশ কৃষি খাতে বরাদ্দ দেয়া হবে। এটা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানে পরিকল্পনা। কৃষকদের তাদের উৎপাদিত পণ্য ন্যায্য দামের অভাবে ফেলে দেয়া লাগবে না! বিএনপি ক্ষমতায় এলে কৃষকের উন্নয়নে নানা পরিকল্পনা নেয়া হবে; যাতে সারা বছরই কৃষকদের মুখে হাসি থাকে। ফসলের ন্যায্যমূল্য বিক্রয়ের জন্য প্রতিটি ইউনিয়নে সরকারি ক্রয় কেন্দ্র খোলা হবে। কৃষকের পাকা ধান ফেলে পালিয়ে বেড়াতে হবে না। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার সরকারের আমলে দেশে কৃষকের কোনো মূল্য ছিল না। তারা তাদের কষ্টার্জিত ফসলের মূল্য পায়নি। বরং দেশের দুই তৃতীয়াংশ খেটে খাওয়া মানুষকে বিনা কারণে জেলে যেতে হয়েছে। পুলিশ ও আদালতে টাকা খরচ করতে করতে নিঃস্ব হতে হয়েছে। সমাবেশ থেকে আগামী নির্বাচনে দেশকে রক্ষা করতে ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিতের জন্য সবাইকে প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানানো হয়।

চুড়ামনকাটি ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি অধ্যাপক আবু সাঈদের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন জেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক মকবুল হোসেন, সদস্য সচিব সিকদার সালাউদ্দিন। এসময় উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক নার্গিস বেগম, যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকন, সদস্য সচিব সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, সদস্য গোলাম রেজা দুলু, মিজানুর রহমান খান, সদর উপজেলা সাধারণ আঞ্জুরুল হক খোকন, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আনসারুল হক রানা, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার রবিউল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা আমির ফয়সাল, জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান বাপ্পি প্রমুখ।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

‘পাকা ধান না কেটে পুলিশের ভয়ে বাগানে বাগানে রাত কাটিয়েছি’

যশোরে ব্যতিক্রমী ও বর্ণাঢ্য আয়োজনে কৃষক সমাবেশ

আপডেট সময় : ০২:১৪:১৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

যশোরে ব্যতিক্রমী ও বর্ণাঢ্য আয়োজনে কৃষক সমাবেশ করেছে কৃষক দল। মঙ্গলবার বিকালে যশোর সদরের চুড়ামনকাটিতে ইউনিয়ন কৃষকদল এই কৃষক সমাবেশের আয়োজন করে। সমাবেশকে ঘিরে সমাবেশ স্থলে ঢল নামে হাজারো কৃষাণ-কৃষাণী, জনতার। কেউ গ্রামের মেঠো পথ দিয়ে সুসজ্জিত গরুর গাড়ি নিয়ে, কেউবা জমির আইল বেয়ে লাঙল, জোয়াল, মাথাল, কাঁচি নিয়ে যোগ দেন সমাবেশে। সমাবেশে বিগত দিনের নির্যাতন-বঞ্চনার অভিযোগ করেন কৃষকেরা।

সমাবেশে বিগত সরকারের সময়ে নির্যাতিত কৃষক মহাসিন আলম নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, ‘মিথ্যা স্বপ্ন দেখিয়ে আওয়ামী লীগ কৃষকদের ভোট নিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলো। ক্ষমতায় এসে কৃষকের উন্নয়নে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিলেও তারা কৃষককে মনে রাখেনি। গায়ে গতরে খেটেও কৃষকের ভাগ্য উন্নয়ন হয়নি। মোটাতাজা হয়েছে আওয়ামী লীগের নেতারা। নিজেদের উৎপাদিত ধান পাট, শাক সবজির ন্যায্য দাম পায়নি। ২০ টাকার সার ৩০ টাকায় বিক্রি করেছে। সার পেট্রোলের দাম বাড়িয়ে উৎপাদন খরচ দ্বিগুণ করেছে। এই কৃষকের ভোটে এমপি মন্ত্রী হয়ে নেতারা মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাদের বাড়িতে ঘুমোতে দেয়নি। পাকা ধান না কেটে পুলিশের ভয়ে বাগানে বাগানে রাত কাটিয়েছি।’

চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের কমলাপুর গ্রামের এই কৃষক মহাসিন আলমের ভাষ্য, বিগত আওয়ামী লীগের সরকারের সময়ে নাশকতা মামলায় তিনি কারাবরণ ও দীর্ঘদিন আটকের ভয়ে আত্মগোপনে থেকেছেন। তার মতো অনেকেই বিগত সময়ে কৃষকের উপর নির্যাতন, বঞ্চনা আর ফসল উৎপাদন করেও ন্যায্য নাম না পাওয়ার ক্ষোভ প্রকাশ করেন। একইসাথে কৃষকদের ভাগ্য উন্নয়নে নানা প্রস্তাবনা তুলে ধরেন।

কৃষক জনগোষ্ঠীকে সংগঠিত করার লক্ষে এই কৃষক সমাবেশের আয়োজন করে চুড়ামনকাটি ইউনিয়ন কৃষকদল। কৃষকের পতিত ধান ক্ষেতে অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত।

সমাবেশে বেশ কয়েকজন কৃষকের অনুভূতি ও প্রস্তাবনা শুনে বক্তব্য রাখেন প্রধান অতিথি বিএনপির বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত। তিনি বলেন, ‘দেশে একমাত্র বিএনপি কৃষকদের নিয়ে ভাবে। বিএনপি ক্ষমতায় এলে জাতীয় বাজেটের ৮ শতাংশ কৃষি খাতে বরাদ্দ দেয়া হবে। এটা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানে পরিকল্পনা। কৃষকদের তাদের উৎপাদিত পণ্য ন্যায্য দামের অভাবে ফেলে দেয়া লাগবে না! বিএনপি ক্ষমতায় এলে কৃষকের উন্নয়নে নানা পরিকল্পনা নেয়া হবে; যাতে সারা বছরই কৃষকদের মুখে হাসি থাকে। ফসলের ন্যায্যমূল্য বিক্রয়ের জন্য প্রতিটি ইউনিয়নে সরকারি ক্রয় কেন্দ্র খোলা হবে। কৃষকের পাকা ধান ফেলে পালিয়ে বেড়াতে হবে না। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার সরকারের আমলে দেশে কৃষকের কোনো মূল্য ছিল না। তারা তাদের কষ্টার্জিত ফসলের মূল্য পায়নি। বরং দেশের দুই তৃতীয়াংশ খেটে খাওয়া মানুষকে বিনা কারণে জেলে যেতে হয়েছে। পুলিশ ও আদালতে টাকা খরচ করতে করতে নিঃস্ব হতে হয়েছে। সমাবেশ থেকে আগামী নির্বাচনে দেশকে রক্ষা করতে ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিতের জন্য সবাইকে প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানানো হয়।

চুড়ামনকাটি ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি অধ্যাপক আবু সাঈদের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন জেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক মকবুল হোসেন, সদস্য সচিব সিকদার সালাউদ্দিন। এসময় উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক নার্গিস বেগম, যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকন, সদস্য সচিব সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, সদস্য গোলাম রেজা দুলু, মিজানুর রহমান খান, সদর উপজেলা সাধারণ আঞ্জুরুল হক খোকন, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আনসারুল হক রানা, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার রবিউল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা আমির ফয়সাল, জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান বাপ্পি প্রমুখ।