১৪৬টির মধ্যে ১১৬টিই অবৈধ
যশোরের ইটভাটার বায়ু দূষণ ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ অবস্থায়

- আপডেট সময় : ১২:৪২:১১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ ২৪ বার পড়া হয়েছে
যশোরের বায়ু দূষণ ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ অবস্থায় পৌঁছেছে। এরজন্য প্রধানত দায়ী ইটভাটার ১১৬টিই অবৈধ। জেলার ১৪৬টি ইটভাটার মধ্যে বৈধ ইটভাটার সংখ্যা মাত্র ৩০টি। দীর্ঘকাল পর পরিবেশ অধিদপ্তর অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। গুড়িয়ে দিতে শুরু করেছে অবৈধ ভাটা। জরিমানা করা হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। তবে আইনি বাধ্যবাধকতাসহ নানা জটিলতায় থমকেও যাচ্ছে অনেক উদ্যোগ। এদিকে ইটভাটাসহ নানা দূষণে যশোরের পরিবেশ ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ জায়গায় পৌঁছেছে, বলছে খোদ সরকারি প্রতিষ্ঠানটি।
সূত্র জানায়, পরিবেশ অধিদপ্তর ২০০১ সালে দেশের সকল ব্রিক ফিল্ডকে ব্যারেল্ড বা উচুঁ চিমনিতে রূপান্তরের সিদ্ধান্ত নেয়। ২-৩ বছরের মধ্যে ইটভাটা মালিকরা ভারত থেকে দক্ষ কারিগর এনে তা সম্পন্ন করেন। ২০০৮ সালে আবার কাঠ কয়লার পরিবর্তে সম্পূর্ণ জিগজ্যাগ ভাটায় রুপান্তরের আইন করা হয়। সর্বশেষ ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) আইন, ২০১৯-এ ৫টি স্থানে ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না উল্লেখ করা হয়। এরমধ্যে বিশেষ কোনো স্থাপনা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, ক্লিনিক, গবেষণা প্রতিষ্ঠান বা অনুরুপ কোনো স্থান বা প্রতিষ্ঠান হতে কমপক্ষে এক কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে, সরকারি বনাঞ্চলের সীমারেখা হতে ২ কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন করতে পারবে না বলে আইনে উল্লেখ করা হয়। এতে উৎপাদনে থাকা ইটভাটাগুলো বিড়ম্বনায় পড়ে। আইন প্রয়োগে যশোরের পরিবেশ অধিদপ্তর গত তিনমাসে কঠোর অবস্থান নেয়। এরমধ্যে অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে জানুয়ারি মাসে ১৩টি এবং নভেম্বর মাসে ৮টি ভ্রাম্যমাণ আদালত কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এসব অভিযানে ৮টিতে কাচা ইট ও কিলন ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আংশিক ভাঙ্গা হয় ১১টির, একটি ভাটার চিমনি ভেঙ্গে কার্যক্রম বন্ধ এবং অপরটির কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এসব অভিযানে ২৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
এদিকে অভিযান চলাকালে অনেক বিড়ম্বনার মধ্যেও পড়তে হয় বলে সংশ্লিষ্ঠরা জানান। বিভাগীয় শহর খুলনা থেকে ম্যাজিস্ট্রেট আনতে হয়। জেলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পর্যাপ্ত জনবল মেলে না। রয়েছে অধিদপ্তরের নিজস্ব জনবলেরও সীমাবদ্ধতা। গত ১৬ জানুয়ারি মণিরামপুরের মেসার্স গোল্ড ব্রিকস-৩ ভাঙ্গার উদ্দেশ্য নিয়ে অভিযানে গেলে স্থানীয় ৪-৫শ’ মানুষ ভাটা এলকায় জড়ো হয়ে বাঁধা দেন। এতে সম্পূর্ণ না পেরে ভাটা আংশিক ভাঙ্গা এবং সাড়ে চার লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, বেশকিছু অভিযানে গিয়ে হাইকোর্টের আদেশে কার্যক্রম বন্ধ রাখতে হয়। এরমধ্যে ৪৫টি রিট মামলা রয়েছে। এসব মামলার মধ্যে অবশ্য ১৯টি নিষ্পত্তিও হয়েছে। ২৪টির জবাব দেয়া হয়েছে, যা দ্রুতই নিষ্পত্তি করে কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে।
এদিকে ইটভাটাসহ অন্যান্য দূষণে যশোরের পরিবেশ বিপর্যয় ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ পর্যায়ে পৌঁছেছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে ২৮ জানুয়ারির সর্বশেষ বায়ুদূষণ মনিটরিং সেলের তথ্য অনুযায়ী, জেলার বায়ুর গুণগত মান প্রতি ঘনমিটারে ২৫৮ মাইক্রোগ্রামে পৌঁছেছে। অথচ সহনশীল মানমাত্রার পরিমাণ ২ দশমিক ৫ পিএম। সূত্র মতে, বায়ু দুষণের জন্য ৬০ ভাগই দায়ী ইটভাটা। একেকটি ইটভাটায় প্রতি মওসুমে এক হাজার টন কয়লা এবং ১০ বিঘা জমির টপ সয়েল লাগে। এককেজি কয়লায় ৬শ’ গ্রাম কার্বন নিঃসরণ হলেও প্রত্যেক ভাটা প্রতি মওসুমে অন্তত ৬শ’ কেজি কার্বণ নিঃসরণ করছে। আবার কয়লার মান উন্নত না হওয়ায় দূষণের মাত্রা আরও বেশি বলে ধারনা করা হচ্ছে।
যশোর জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি কাজী নজীর আহম্মেদ মুন্নু বলেন, আমাদের ইটভাটার ব্যবসা অনেক পুরানো। সব কর্তৃপক্ষের লাইসেন্স গ্রহণ এবং নবায়ন করেই আমরা ২০২০-২১ সাল পর্যন্ত নিয়ম মেনেই ব্যবসা পরিচালনা করে আসছি। কিন্তু নতুন আইনের কারণে পরিবেশ অধিদপ্তর ছাড়পত্র না দেয়ায় জেলা প্রশাসক লাইসেন্স দিচ্ছেন না। তিনি আরও বলেন, ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেক প্রতিষ্ঠান মারাত্মক সংকটে পড়েছে। অনেকে ঋণগ্রস্থ হয়েছে। আমরা পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছে ২০৩০ সাল পর্যন্ত সময় চেয়েছি। এই সময়ের মধ্যে আমরা আমাদের ইটভাটার ব্যবসা থেকে সরে আসব।
পরিবেশ অধিদপ্তর যশোরের উপ-পরিচালক মো. এমদাদুল হক বলেন, গত নভেম্বরে আমরা ইটভাটা মালিকদের সাথে সভা করে জানিয়ে দিয়েছি অবৈধ ইটভাটা আমরা আর চালাতে দেব না। এরপর থেকেই আমরা অভিযান শুরু করেছি।