খুলনা ট্যাংকলরি শ্রমিকদের ধর্মঘট চলমান
জ্বালানি তেলশুন্য পাম্পগুলো, জনভোগান্তি চরমে

- আপডেট সময় : ০৩:২৫:২৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২৫ ৩৮ বার পড়া হয়েছে
আজ (মঙ্গলবার) তৃতীয় দিনের মতো নগরীর খালিশপুরের কাশিপুরে অবস্থিত পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা তেল ডিপো থেকে তেল উত্তোলন বন্ধ রেখেছেন ট্যাংকলরি শ্রমিকরা। তারা বলেছেন খুলনা বিভাগীয় ট্যাংকলরি শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আলী আজিমের মুক্তি না হওয়া তাদের এই ধর্মঘট। এর ফলে বন্ধ রয়েছে খুলনা বিভাগের ১০ জেলা, বৃহত্তর ফরিদপুরের জেলাগুলোসহ ১৬ জেলায় তেল সরবরাহ। শ্রমিক নেতাদের দাবি নেতাকে মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত তাদের ধর্মঘট আগমী দিনেও অব্যাহত থাকবে। এতে তেলশুন্য হয়ে পড়তে শুরু করেছে পাম্পগুলো। পাম্পে এসে তেল না পেয়ে বিড়ম্বনায় পড়ছেন গাড়িচালক ও তেল সংগ্রহকারীরা।
মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা যায়, পাম্পগুলো এক এক করে জ্বালানি তেলশুন্য হতে থাকে। নগরীর পাওয়ার হাউজ মোড়ে কেসিসি পেট্রোলিয়াম পাম্পের কর্মী ফজলে রাব্বি রাজু বলেন, সকাল ১০টার মধ্যে ডিজেল ও অকটেন শেষ হয়ে যায়। আর পেট্রোল শেষ হয় দুপুরের মধ্যে। তারপর আমরা পাম্প বন্ধ করে দিই। আর মেঘনা মডেল পাম্পের তেল সরবরাহকারী রুহুল আমিন বলেন, শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির কারণে তেল উত্তোলন করা যায়নি। আর রবিবার সকালে অল্প কিছু তেল পেয়েছিলাম। দুপুর থেকেই শুরু হয় ধর্মঘট। সেই থেকে তেল যা ছিল বিক্রি করেছি। কিন্তু দুপুর থেকে পাম্প ড্রাই হয়ে গেছে। তাই পাম্প বন্ধ রখেছি। আবার যখন তেল পাব, তখন পাম্প খুলবো।
অপদিকে দুপুরের পর যারা পাম্পে তেল নিতে আসেন তারা পড়েন বিড়ম্বনায়। দেবাশীষ নামে এক চিকিৎসক বলেন, পাম্পে তেল নাই। গাড়িতেও তেল কম। জরুরি অপারেশনে যেতে হবে। বুঝতে পারছিনা হাসপাতালে পৌঁছাতে পারবো কিনা। আর পারলেও বাসায় ফিরতে পারবো কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। মোটরসাইকেল চালক মোবারক হোসেন বলেন, ব্যবসার কাজে অনেক যায়গায় যেতে হবে। চলতে না পারলে তো অনেক কিছু আমার বন্ধ হয়ে যাবে। সমাধানের মাধ্যমে সবকিছুর সমাধান হওয়া প্রয়োজন বলেও তিনি মনে করেন। তোবারক হোসেন তেল না পেয়ে ক্ষোভে বলেন, জনগণের কষ্টের কথা ভাবার লোকের অভাব। সকলে যেকোনো মূল্যে নিজেরটুকু অর্জন করতে চায়।
ধর্মঘটের তৃতীয় দিনে মঙ্গলবার সকাল ৮টায় শ্রমিকরা নতুন রাস্তার মোড়ে শ্রমিক ইউনিয়নের সামনে বিক্ষোভ করেন শ্রমিকরা। বিক্ষোভে তারা তাদের নেতার মুক্তি দাবি করেন। একই সঙ্গে শ্রমিকদের নামে অন্য যে সকল মামলা চলমান রয়েছে সেগুলোও প্রত্যাহারের দাবি জানান। এসময় তারা বলেন, আমাদের দফা এক, দাবি এক, আলী আজিমের মুক্তি।
ট্যাংকলরি শ্রমিক ইউনিয়ন খুলনা বিভাগীয় সভাপতি এনাম মুন্সী বলেন, আজও আমরা আমাদের নেতার জামিন চেয়ে ব্যর্থ হয়েছি। মহানগর মুখ্য হাকিমের আদালত থেকে আজ জজ আদালতে গিয়েছিলাম। কিন্তু আদালত মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী ২ তারিখে নির্ধারণ করেছেন। তাই আমাদের ধর্মঘট অব্যাহত থাকছে। তবে আগামীকাল (বুধবার) মালিক সমিতির সঙ্গে যৌথসভায় পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। তিনি আরও বলেন, অনেক আগে বিএনপির ওয়ার্ড কার্যালয় ভাংচুরের ঘটনায় মামলায় সাধারণ সম্পাদক আলী আজিমকে বরিবার দুপুরে গ্রেফতার করে কেএমপির ডিবি পুলিশ। যা মিথ্যা, কেননা এই ঘটনা আলী আজিম জানতেনও না। মামলা হওয়ার পর তিনি জেনেছেন।
অপরদিকে জ্বালানি তেল পরিবেশক সমিতির খুলনা বিভাগীয় শাখার যুগ্ম সম্পাদক মো. মামুন গাজী বলেন, শ্রমিকদের আমরা জোর করতে পারিনা। তাদেরও নিরাপত্তা আছে। তাই তারাই সিদ্ধান্ত নেবে তারা কি করবে। তবে তাদের কর্মবিরতীর কারণে প্রায় সকল পাম্পেরই তেলশুন্য হয়ে গেছে। তিনি আর বলেন, শুধুমাত্র শ্রমিকরাই নয়, দেশের পট পরিবর্তনের পর অনেক মালিকদের নামেও মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। এ থেকে আমরাও মুক্তি চাই। কেননা এভাবে চলতে থাকলে দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্থ হবে। এজন্য প্রশাসনকে বড় ভূমিকা নিতে হবে। না হলে পরিস্থিতি আরও জটিল হবে।