চৌগাছায় ছাত্রলীগের নতুন কমিটি নিয়ে বিক্ষোভ
প্রতিবেদক :
যশোরের চৌগাছা উপজেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিক্ষোভ করেছেন ছাত্রলীগের পদবঞ্চিত নেতারা। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন নতুন কমিটিতে পদ পাওয়া কয়েকজন নেতাও। আজ শনিবার (১১ মার্চ) সন্ধ্যায় তারা চৌগাছা বাজারে বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধ করেন। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনে।
তাদের অভিযোগ ত্যাগীদের মূল্যায়ন করা হয়নি। জামায়াত বিএনপি ঘরানা পরিবারদের সন্তানদের গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়া হয়েছে। যে কারণে তারা এই কমিটিকে অবৈধ মনে করেন এবং কমিটির বাতিল চান।
এর আগে, দীর্ঘ ১৬ মাস কমিটিবিহীন থাকার পর শনিবার দুপুরে ৩১ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেয় জেলা ছাত্রলীগ। জেলা ছাত্রলীগের প্যাডে হাতে লেখা সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক সাক্ষরিক এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে কমিটিকে আগামী ৩ মাসের জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়।

পদবঞ্চিত ও নতুন কমিটিতে স্থান পাওয়া কয়েকজন নেতা জানান, নতুন কমিটি গঠনের লক্ষে উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করে সাত দিনের মধ্যে জেলা ছাত্রলীগের কাছে সিভি জমা দেয়ার জন্য আগ্রহীদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। এতে সাড়া দিয়ে প্রায় ১০৭ নেতা সভাপতি-সম্পাদক পদ পেতে জীবনবৃত্তান্ত জমা দেন। এরপর শনিবার ১১ মার্চ ৩১ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি দেয়া হয়।
কমিটির তালিকা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ হতেই ছাত্রলীগে পদবঞ্চিতরা জেলা ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতাদের জড়িয়ে নানা সমালোচনামূলক স্ট্যাটাস দিতে শুরু করে। কমিটি দেয়ার ক্ষেত্রে সিনিয়রিটি না মানা, অসাংগঠনিক ও জামায়াত-বিএনপি পরিবারের সন্তানদের পদ-পদবী দেয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। পরে সন্ধ্যায় চৌগাছা শহরে পাঁচ যুগ্ম আহ্বায়কের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালিত হয়। মিছিলটি শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে ঘোষিত কমিটিকে অবৈধ বলে দাবি করেন।
মিছিল ও সমাবেশে পাঁচ যুগ্ম আহ্বায়ক বলেন, বিপুল পরিমান অর্থ-বাণিজ্যের মাধ্যমে এই কমিটি দেয়া হয়েছে। এতে সাংগঠনিক কর্মকান্ডে অংশ না নেয়া একজনকে আহ্বায়ক করা হয়েছে, যে সকল যুগ্ম আহ্বায়কের থেকে জুনিয়র। এছাড়া অর্থের বিনিময়ে এই অবৈধ কমিটি দেয়া হয়েছে, যাতে সাংগঠনিক কর্মকান্ডে অংশ না নেয়া, বিতর্কিত ও জামায়াত-বিএনপি পরিবারের সন্তানদের পদ-পদবী দেয়া হয়েছে। তারা অবিলম্বে এই কমিটি বাতিলের দাবি জানান।
ঘোষিত কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক-২ হাসান রেজা জানান, ‘যাকে আহ্বায়ক করা হয়েছে সারজান দেওয়ান সোহেল সে কখনও ছাত্রলীগের রাজনীতি করেনি। তার সঙ্গে কিভাবে ছাত্রনীতি করবো। তাছাড়া সে বিএনপি ঘরানার মানুষ। তার চাচা স্থানীয় বিএনপি নেতা ও ইউপি চেয়ানম্যান। এই কমিটি মানি না। এটি বাতিল করে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতি করে একইসঙ্গে যারা রাজপথে থাকে সেই যোগ্য ব্যক্তি দিয়ে নেতা নির্বাচন করুক।

অভিযোগের বিষয়ে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সালাউদ্দিন কবির পিয়াস এবং সাধারণ সম্পাদক তানজীব নওশাদ পল্লবের মুঠোফোনে কয়েকবার যোগাযোগ করা হলে দুজনেরই নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়। তবে জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ইয়াসিন আরাফাত তরুন বলেন, ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী চৌগাছার কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ছাত্রলীগ বৃহৎ সংগঠন; অনেকেই নেতৃত্বে আসতে চাইবে, সবার চাহিদা মতো তো স্থান দেওয়া সম্ভব না। কোনো বির্তকিত ব্যক্তিকে কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়নি বলে তিনি উল্লেখ করেন।
অনুমোদন দেওয়া কমিটিতে আহ্বায়ক করা হয়েছে সারজান দেওয়ান সোহেলকে। এছাড়া ৭ যুগ্ম আহ্বায়ক আকরামুল ইসলাম, হাসান রেজা, সফিউর রহমান রাথিক, আব্দুল করিম, রুবেল হোসেন, ফিরোজ হোসেন ও সাগর কুমার বিশ্বাস।
২৩ জন সদস্য হলেন : মিনহাজ রহমান জিসাদ, মিকাইল ইসলাম সোহেল, জোবায়ের হোসেন রকি, ফয়সাল হোসেন রানা, মাহাবুবুর রহমান রিয়াজ, হাসিবুল হাসান শান্ত, রেজাউল করিম সাগর, ইয়াছিন আহাম্মেদ শান্ত, সানজিদ কবির, জাহিদ হাসান শোভন, হাবিবুর রহমান পাভেল, মামুন হোসেন অনিক, সাকিব পারভেজ, নিশাদ আরেফিন অন্তু, আক্তারুল ইসলাম, হযরত আলী, শাফায়েত হোসেন আকাশ, রিফাত আরেফিন, আল আমিন নয়ন, জয়ন্ত কুমার, বাবুল হাসান, আবিদুজ্জামান জিসান ও সোহাগ আলী।
প্রসঙ্গত, যশোর জেলা ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি আরিফুল ইসলাম রিয়াদ ও সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বিপুল ২০১৫ সালের ১৬ জুন চৌগাছা উপজেলা ছাত্রলীগের মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটি বাতিল করে নতুন কমিটি ঘোষণা করেন। ১১ সদস্যবিশিষ্ট সেই কমিটিতে ইব্রাহিম হুসাইন সভাপতি ও শফিকুজ্জামান রাজু সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মনোনীত হন। কমিটির মেয়াদ দেয়া হয় এক বছর। কিন্তু উপজেলা ছাত্রলীগের এক বছরের কমিটি দায়িত্ব পালন করেন ৬ বছর ৫ মাস। পরবর্তীতে, যশোর জেলা ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি-সম্পাদক দায়িত্বভার গ্রহণ করে মেয়াদ উত্তীর্ণ চৌগাছা উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি ২০২১ সালের ২০ নভেম্বর বিলুপ্ত ঘোষণা করেন কোন আহ্বায়ক কমিটি ছাড়াই।