
‘মাসুম বাচ্চাদের মুখের দিকে তাকিয়ে আমাদের স্বামীকে ফিরিয়ে দেন’
প্রতিবেদক :
যশোরে এক পল্লী চিকিৎসকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিচয়ে তুলে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। আজ মঙ্গলবার (৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে প্রেসক্লাব যশোরে সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন নিখোঁজ পল্লী চিকিৎসকের দুই স্ত্রী। এ ঘটনায় যশোর কোতয়ালী মডেল থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
নিখোঁজ চিকিৎসক সেলিম হোসেন (৪৫) সদর উপজেলার বি-পতেঙ্গালী গ্রামের মৃত আলা বক্সের ছেলে। নিখোঁজের ৭ দিন ধরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দপ্তরে ঘুরে ঘুরে স্বামীকে ফিরে না পেয়ে সংবাদ সম্মেলনে অঝোরে কাঁদেন পল্লী চিকিৎসকের প্রথম স্ত্রী আলজিয়া খাতুন রিনা ও দ্বিতীয় স্ত্রী নাজমা খাতুন। এসময় তাদের চার সন্তান ও স্বজনেরা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, পল্লী চিকিৎসক সেলিম হোসেন দীর্ঘদিন যশোর শহরতলীর গাজীর বাজারে রিনা মেডিকেল নামে একটি চেম্বারে নিয়মিত চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছিলেন। গত ২ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৭টার দিকে দোকানের সামনে একটি সাদা রঙের মাইক্রোবাস থেমে দাঁড়ায়। গাড়ি থেকে ৩৫ থেকে ৪৫ বছর বয়সী ১০ থেকে ১২ জন নেমে সেলিম হোসেনকে পরিচয় দেন তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোক। এখনই তাদের সঙ্গে যেতে হবে। সেলিম রেজা তাদের কাছে পরিচয়পত্র দেখতে চাইলে তারা কোনো কার্ড না দেখিয়ে দোকানের সার্টার বন্ধ করে সেলিম হোসেনকে প্রাইভেটকারে করে তুলে নিয়ে যায়। এরপর তার স্ত্রী ও স্বজনেরা তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে সেটি বন্ধ ও বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেও তার সন্ধান পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে কয়েকদফা সেলিমের পরিবার যশোর ডিবি পুলিশ, পিবিআই, র্যাবসহ বিভিন্ন দপ্তরে খোঁজ নিয়েও সেলিমের সন্ধান পাননি। সেলিম হোসেনের রাজনৈতিক বা দলীয় সংযুক্তি নাই বলে সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে অঝোরে কাঁদতে কাঁদতে দ্বিতীয় স্ত্রী নাজমা খাতুন বলেন, দুটি পরিবারে তাদের তিন ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। এর মধ্যে একটি বাকপ্রতিবন্ধী। দুই পরিবারই পল্লী চিকিৎসকের উপার্জনের প্রতি নির্ভরশীল। তার অনুপস্থিতিতে পরিবার দুটি অসহায়ভাবে দিন অতিবাহিত করছে। শিশুরা তাদের বাবাকে না পেয়ে ‘বাবা বাবা’ বলে ডাকছে। প্রতিবন্ধী ছেলে ও ছোট মাসুম বাচ্চাদের দিকে মুখের দিকে চেয়ে আমাদের স্বামীকে আমাদের বুকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য প্রশাসন ও সরকার প্রধানের সহযোগিতা কামনা করেছেন।
জেলা পল্লী চিকিৎসক সমিতির সহ-সভাপতি নজরুল ইসলাম বলেন, সেলিমকে আমরা স্বজ্জন হিসাবেই চিনি। আমাদের এক সহকর্মী নিখোঁজ হওয়ার পর থেকেই থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। এছাড়া পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ও র্যাবকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। সাতদিন পার হলেও কোনো ফলাফল না পেয়ে আমরা হতাশ। এদিকে পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি না থাকায় পরিবার দুটি আর্থিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। আমরা আমাদের সহকর্মীর দ্রæতই সন্ধান চায়।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) বেলাল হোসাইন বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত চলছে।