Take a fresh look at your lifestyle.

পিটিয়ে ইন্টার্ন চিকিৎসকের হাত-পা ভাঙার অভিযুক্তরাই তদন্ত কমিটির সদস্য!

যশোর মেডিকেল কলেজ

0

প্রতিবেদক :
যশোর মেডিকেল কলেজের ছাত্রাবাসে এক ইন্টার্ন চিকিৎসকের দুই হাত-পা ভেঙ্গে দেওয়ার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিন কার্যদিবসের মধ্যে আজ মঙ্গলবার (৭ ফেব্রুয়ারি) প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা থাকলেও তদন্ত কমিটি আরও দুই কার্যদিবস বাড়ানোর আবেদন করেছেন। তবে এই তদন্ত কমিটি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তাদেরকেই এই কমিটির সদস্য করা হয়েছে। এদিকে, এই ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যশোর কোতোয়ালি মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পাঁচদিন পার হলেও মামলা গ্রহণ ও জড়িতদের কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। অভিযুক্তরা ক্ষমতাসীন দলের ছত্রছায়ায় থাকায় ভুক্তিভোগী জাকিরকে বিভিন্নভাবে হুমিক দিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

হাসপাতালে ভর্তি গুরুতর ইন্টার্ন চিকিৎসক জাকির হোসেনের ভাই জাহাঙ্গীর আলম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, গত মঙ্গলবার আমার ভাইকে বেধড়ক মারধর করলেও এখনও বিচার পেলাম না। এমনকি থানায় অভিযোগ দিলেও সেটি মামলা হিসাবে গ্রহণ করেনি পুলিশ। ফলে অভিযুক্তরা তার ভাইয়ের কাছ থেকে কেঁড়ে নেওয়া মোটরসাইকেলে এসে তার ভাইকে হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন। একইসাথে মারামারির সাথে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে জড়িত সহকারী হোস্টেল সুপার ডা. ফয়সাল কাদির শাওনকে তদন্ত কমিটির সদস্য করা হয়েছে। তিনি অভিযুক্তদের বাঁচাতে নানাভাবে প্রভাবিত করছেন। ফলে এই তদন্ত কমিটি দিয়ে ভালো কোনো ফলাফল আশা করছি না। একটি নিরপেক্ষ সুষ্ঠু তদন্ত শেষে জড়িতদের দ্রæত আটক ও বিচারের দাবি জানাচ্ছি।

এ বিষয়ে সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় ও তদন্ত কমিটির প্রধান প্রধান নুর কুতুউল আলমের নাম্বারে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেনি। তবে কমিটির সদস্য প্রভাষক আলাউদ্দিন আল মামুন বলেন, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে আমরা দুইদিন বাড়িয়েছি। নিরপেক্ষ তদন্ত শেষে দোষীদের বিরুদ্ধে অধ্যক্ষের কাছে রির্পোট জমা দেওয়া হবে।

যশোর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ মহিদুর রহমান বলেন, অধিকতর তদন্তের স্বার্থে দুইদিন সময় দেওয়া হয়েছে। পাঁচ সদস্যের মধ্যে একজন যদি প্রভাবিত করে; তার প্রভাব গুরুত্বপূর্ণ হবে না। দ্রুতই দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

যশোর কোতয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাজুল ইসলাম বলেন, মেডিকেল কলেজ তদন্ত রির্পোট দেওয়ার পরই অভিযোগটি মামলা হিসাবে গ্রহণ করা হবে। আর এ বিষয়ে সহকারী হোস্টেল সুপার ডা. ফয়সাল কাদির শাওনের নাম্বার বন্ধ পাওয়ায় তার বক্তব্য নেওয়া যায়নি।

প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার রাতে মেডিকেল কলেজের ছাত্রবাসের ১০৪ নম্বর কক্ষে জাকির হোসেন নামে এক ইন্টার্ন চিকিৎসককে পিটিয়ে দুই পা, দুই হাত ও বুকের পাজরের একটি হাঁড় ভেঙে দেয় তার সহপাঠীরা। জাকির হোসেনের অভিযোগ, ইন্টার্ন চিকিৎসক মেহেদী হাসান লিয়ন, শামীম হাসান, আব্দুর রহমান আকাশ, তানিমসহ আরও তিন-চারজন ছাত্রবাসের ১০৪ নম্বর কক্ষে প্রতিদিন মাদকের আড্ডা বসান। রাতভর চিৎকার-চেঁচামেচি করেন। ঐ কক্ষের পাশেই তার কক্ষ। এ কারণে পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটে। ফলে তিনি প্রতিবাদ জানান। এর জেরে মঙ্গলবার রাত পৌনে ৯টায় তারা তার কক্ষে এসে হকিস্টিক ও জিআই পাইপ দিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে জখম করে। হামলাকারীরা তার নগদ অর্থ ও মোটরসাইকেল নিয়ে যায়। দীর্ঘদিন হলে মাদক সেবন ও বহিরাগতরা অনুপ্রবেশ করলেও ছাত্রবাসের সহকারী হোস্টেল সুপার ডা. ফয়সাল কাদির শাওন কোনো ব্যবস্থা নেন না। বরং তিনি নানাভাবে ঐসব শিক্ষার্থীদের ইন্ধন দিয়ে আসছেন অভিযোগ জাকিরের। আহত ইন্টার্ন চিকিৎসক জাকির হোসেনকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও বিষয়টি গোপন রাখা হয়। এরপর বৃহস্পতিবার বিকেলে আহতের বড়ভাই জাহাঙ্গীর আলম যশোর কোতোয়ালি থানায় লিখিত অভিযোগ দিলে বিষয়টি জানাজানি হয়। মেডিকেল কলেজ সূত্র জানায়, হামলার শিকার জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে অসামাজিক কাজে জড়িত এমন চক্রের সঙ্গে চলাফেরার অভিযোগ রয়েছে। এর আগে তিনি পাবনা মেডিকেল কলেজে অধ্যয়নকালে একবার বহিষ্কার হন। একই ধরনের অপরাধে যশোর মেডিকেল কলেজেও তার ইন্টার্ন কোর্সের কাগজপত্র এখনও কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পায়নি। জাকির হোসেন রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার হরিশ্বর গ্রামের মৃত সুরুজ জামানের ছেলে।

 

Leave A Reply

Your email address will not be published.