এসএসসি পরীক্ষা শুরু আজ
পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে কোচিংয়ে শিক্ষককে পরীক্ষা কেন্দ্রের আশেপাশে পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিক মোবাইল কোর্ট আইনে দন্ড
প্রতিবেদক :
মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হচ্ছে আজ বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর)। যশোর শিক্ষাবোর্ডের অধীনে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে একলাখ ৭০ হাজার ৩৭৭ পরীক্ষার্থী। যা গত বছর পরীক্ষার্থী ছিল এক লাখ ৮১ হাজার ৬৮৭ জন। গতবছরের তুলনায় এবার ১১ হাজার ৩১০ জন কম। করোনা মহামারি ও বাল্যবিয়েসহ নানা কারণে এবার পরীক্ষার্থী কিছুটা কমেছে দাবি সংশ্লিষ্টদের। বৈরি আবহাওয়ায় বৃষ্টিবাদল থাকলেও শুরু হতে যাওয়া এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা নিয়ে কোনো অনিশ্চয়তা নেই বলে জানিয়েছেন ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাবকমিটি।
এদিকে, এসএসসি পরীক্ষা সুষ্ঠু, নকলমুক্ত ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে গ্রহণের লক্ষে জেলা প্রশাসন নানা নির্দেশনা দিয়েছে। পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে কেন্দ্রের আশেপাশে সকল ফটোকপির দোকানগুলো বন্ধ থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সাধারণত, এসএসসি পরীক্ষা হয় বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে। কিন্তু করোনা সংক্রমণের কারণে আড়াই বছর ধরে এলোমেলোভাবে চলছে শিক্ষাপঞ্জি। কখনো পরীক্ষা বাতিল হয়েছে, কখনোবা পিছিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে বন্যার কারণে এ পরীক্ষা আরও পিছিয়ে যায়। এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল গত জুন মাসে। কিন্তু ওই সময় সিলেটসহ দেশের কয়েকটি এলাকায় ভয়াবহ বন্যার কারণে পরীক্ষা শুরুর আগমুহূর্তে তা স্থগিত করা হয়েছিল। পরে আবার পরিকল্পনা করা হয়েছিল গত ১৭ আগস্ট থেকে এই পরীক্ষা শুরুর। কিন্তু মধ্য আগস্টে বন্যার আশঙ্কায় তাও পিছিয়ে দেওয়া হয়। সর্বশেষ পরিবর্তিত সময় অনুযায়ী আজ থেকে শুরু হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ এই পাবলিক পরীক্ষা।
সংশ্লিষ্ঠ সূত্র জানায়, এবারের এসএসসি পরীক্ষায় যশোর শিক্ষাবোর্ড থেকে অংশ নিচ্ছে একলাখ ৭০ হাজার ৩৭৭ জন পরীক্ষার্থী। এরমধ্যে ছাত্র ৮৫ হাজার ৫৯৯ জন ও ছাত্রী ৮৪ হাজার ৭৭৮ জন। মোট পরীক্ষার্থীদের মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ৩৮ হাজার ৪২৪, মানবিক বিভাগের একলক্ষ ৯ হাজার ৫০৭ এবং বাণিজ্য বিভাগের ২২ হাজার ৪৪৬ জন পরীক্ষার্থী রয়েছে। পরীক্ষার্থীদের মধ্যে একলাখ ৫৯ হাজার ৯৯০ জন নিয়মিত, ১০ হাজার ১৪৯ জন অনিয়মিত এবং ২৩৮ জন মান উন্নয়ন পরীক্ষার্থী রয়েছে।
মোট ২৯৩টি কেন্দ্রের মধ্যে যশোর জেলায় সর্বোচ্চ ৫২টি কেন্দ্রে অংশ নেবে ২৮ হাজার ৫২ জন পরীক্ষার্থী। এছাড়া, খুলনা জেলার ৫৮টি কেন্দ্রে ২৬ হাজার ৮, বাগেরহাটের ২৭ কেন্দ্রে ১৪ হাজার ২৮৭, সাতক্ষীরার ২৭ কেন্দ্রে ১৯ হাজার ৭০, কুষ্টিয়ার ৩১ কেন্দ্রে ২৪ হাজার ১৫৩, চুয়াডাঙ্গার ১৮ কেন্দ্রে ১১ হাজার ১২২, মেহেরপুরের ১৩ কেন্দ্রে ৭ হাজার ৭২৪, নড়াইলের ১৪ কেন্দ্রে ৮ হাজার ১৯৩, ঝিনাইদহের ৩৬ কেন্দ্রে ১৯ হাজার ৯০৩ এবং মাগুরা জেলার ১৭ কেন্দ্রে ১১ হাজার ৮৬৫ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে।
ইতিমধ্যে শিক্ষাবোর্ড কর্তৃপক্ষ পরীক্ষা সংক্রান্ত সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। বোর্ড কর্তৃপক্ষ খুলনা বিভাগের ১০ জেলার ২৯৩টি কেন্দ্রের সচিবদের নিয়ে পরীক্ষা সংক্রান্ত মতবিনিময় ও দিক নির্দেশনাও দিয়েছেন।
যশোর শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর মাধব চন্দ্র রুদ্র জানান, সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে এবারের পরীক্ষা সম্পন্নের লক্ষ্যে শিক্ষাবোর্ড কর্তৃপক্ষ সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছে। অন্যবার সকাল ১০টায় পরীক্ষা শুরু হলেও এবার যানজটের কথা বিবেচনা করে বেলা ১১টায় এই পরীক্ষা শুরু হবে। শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা শুরুর কমপক্ষে ৩০ মিনিট আগে কেন্দ্র ঢুকতে হবে। অনিবার্য কারণে কোনো পরীক্ষার্থীকে এরপরও ঢুকতে দিতে হলে তার নাম, রোল নম্বর, দেরির কারণ ইত্যাদি একটি নিবন্ধন খাতায় লিপিবদ্ধ করে ওইদিনই সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডে পাঠাতে হবে। আর কোন সেট প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা হবে, তা পরীক্ষা শুরুর ২৫ মিনিট আগে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জানানো হবে। পুনর্বিন্যাস করা পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে হচ্ছে এবারের পরীক্ষা। এজন্য পরীক্ষার সময় তিন ঘণ্টা থেকে কমিয়ে দুই ঘণ্টা করা হয়েছে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ( শিক্ষা ও আইসিটি) মোহাম্মদ মনোয়ার হোসেন বলেন, যশোরের সকল কেন্দ্র সচিবদের ৯টি নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। নির্দেশনাগুলো হচ্ছে : পরীক্ষা কেন্দ্রের ২০০ গজের মধ্যে পাঁচ বা ততধিক ব্যক্তির সমাবেশ, সকলপ্রকার আগ্নেয়াস্ত্র, লাঠি, চাকু ধারালো অস্ত্র ব্যবহার, যেকোনো মাইক্রোফোন ও লাউড স্পিকার ব্যবহার করা যাবে না। পরীক্ষার কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা, কর্মচারী ও পরীক্ষার্থীদের চলাচলে কোনোপ্রকার বাধা প্রদান করা যাবে না। পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে কোচিংয়ে শিক্ষককে পরীক্ষা কেন্দ্রের আশেপাশে পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিক মোবাইল কোর্ট আইনে দন্ড প্রদান করা হবে বলে জানানো হয়েছে।