Take a fresh look at your lifestyle.

যশোর শিক্ষাবোর্ডের অধীনে দেড়লাখ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় বসছে কাল

পরীক্ষার্থী কমেছে প্রায় সাড়ে ১১ হাজার, সকাল ১০টার পরিবর্তে ১১টায় শুরু

0

প্রতিবেদক :
যশোর শিক্ষাবোর্ডের অধীনে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে একলাখ ৭০ হাজার ৩৭৭ জন পরীক্ষার্থী। ২০২১ সালে পরীক্ষার্থী ছিল একলাখ ৮১ হাজার ৬৮৭ জন। গতবছরের তুলনায় এবার ১১ হাজার ৩১০ জন কম। করোনা মহামারি ও বাল্যবিয়েসহ নানা কারণে এবার পরীক্ষার্থী কিছুটা কমেছে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের। আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) পরীক্ষা শুরু হবে। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরীক্ষা গ্রহণের সার্বিক প্রস্তুত গ্রহণ করেছে বোর্ড কর্তৃপক্ষ। এদিকে, এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার চলমান রীতি ভেঙ্গে সকাল ১০টার পরিবর্তে বেলা ১১টায় শুরু হবে ২ ঘণ্টার পরীক্ষা। সংক্ষিপ্ত সিলেবাস ও রাস্তাঘাটে যানজটের কথা বিবেচনা করে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষামন্ত্রণালয়।

বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর মাধব চন্দ্র রুদ্র জানান, এবছর যেসব শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষা দেবে, তারা ২০২০ সালে ৯ম শ্রেণিতে লেখাপড়া করতো। ওই সময় দেশে করোনা মহামারির কারণে তারা নিয়মিত স্কুলে যেতে পারেনি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অনেক অস্বচ্ছল পরিবারের মেয়েদের বাল্যবিয়ে হয়েছে। অনেকে ঝরে গেছে। এসব কারণে এবছর এসএসসি পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কিছুটা কমে গেছে। তিনি আরও জানান, সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে এবারের পরীক্ষা সম্পন্নের লক্ষ্যে শিক্ষাবোর্ড কর্তৃপক্ষ সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছে।

সংশ্লিষ্ঠ সূত্র জানায়, এবারের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে একলাখ ৭০ হাজার ৩৭৭ জন পরীক্ষার্থী। এরমধ্যে ছাত্র ৮৫ হাজার ৫৯৯ জন ও ছাত্রী ৮৪ হাজার ৭৭৮ জন। মোট পরীক্ষার্থীদের মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ৩৮ হাজার ৪২৪, মানবিক বিভাগের একলক্ষ ৯ হাজার ৫০৭ এবং বাণিজ্য বিভাগের ২২ হাজার ৪৪৬ জন পরীক্ষার্থী রয়েছে। পরীক্ষার্থীদের মধ্যে একলাখ ৫৯ হাজার ৯৯০ জন নিয়মিত, ১০ হাজার ১৪৯ জন অনিয়মিত এবং ২৩৮ জন মান উন্নয়ন পরীক্ষার্থী রয়েছে।

মোট ২৯৩টি কেন্দ্রের মধ্যে যশোর জেলায় সর্বোচ্চ ৫২টি কেন্দ্রে অংশ নেবে ২৮ হাজার ৫২ জন পরীক্ষার্থী। এছাড়া, খুলনা জেলার ৫৮টি কেন্দ্রে ২৬ হাজার ৮, বাগেরহাটের ২৭ কেন্দ্রে ১৪ হাজার ২৮৭, সাতক্ষীরার ২৭ কেন্দ্রে ১৯ হাজার ৭০, কুষ্টিয়ার ৩১ কেন্দ্রে ২৪ হাজার ১৫৩, চুয়াডাঙ্গার ১৮ কেন্দ্রে ১১ হাজার ১২২, মেহেরপুরের ১৩ কেন্দ্রে ৭ হাজার ৭২৪, নড়াইলের ১৪ কেন্দ্রে ৮ হাজার ১৯৩, ঝিনাইদহের ৩৬ কেন্দ্রে ১৯ হাজার ৯০৩ এবং মাগুরা জেলার ১৭ কেন্দ্রে ১১ হাজার ৮৬৫ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে।

এরআগে এসএসসি পরীক্ষার নির্ধারিত তারিখ ছিল চলতি বছরের ১৯ জুন। স্থগিত হওয়ার তিন মাস পর আগামীকাল ১৫ সেপ্টেম্বর পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে শিক্ষাবোর্ড কর্তৃপক্ষ পরীক্ষা সংক্রান্ত সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। বোর্ড কর্তৃপক্ষ খুলনা বিভাগের ১০ জেলার ২৯৩টি কেন্দ্রের সচিবদের নিয়ে পরীক্ষা সংক্রান্ত মতবিনিময় ও দিক নির্দেশনাও দিয়েছেন।

এদিকে, গতবছরের তুলনায় এবার যশোর শিক্ষাবোর্ডে এসএসসি পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১১ হাজার ৩১০ জন কম। করোনা মহামারি ও বাল্যবিয়েসহ নানা কারণে এবার পরীক্ষার্থী কিছুটা কমেছে দাবি সংশ্লিষ্টদের। এ বিষয়ে মণিরামপুরের পলাশী বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম বলেন, এবার বিদ্যালয় থেকে ৭৬ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিচ্ছে। এর আগে নিয়েছিল ৯৩ জন। যে ৭৬ জন পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে তারা ১৯ সালে জেএসসিতে অংশ নেয়। সেখানে এই শিক্ষার্থীদের সংখ্যা আরও বেশি ছিল। মাঝে দুই বছর করোনাকালে বাল্যবিয়ে এবং অনেক শিক্ষার্থী পড়াশোনা বাদ দিয়ে কাজকর্মে যোগ দেওয়ায় সেই সংখ্যা কমেছে। আবার অনেক শিক্ষার্থী অন্য প্রতিষ্ঠানেও ভর্তি হয়ে পড়াশোনা করছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যশোর শহরতলী এলাকার একটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, ২০২০ সালে আমার বিদ্যালয়ে তিনটি বিভাগে ৮৮ জন পরীক্ষার্থী ছিল ৯ম শ্রেণিতে। তারাই এবার এসএসসি পরীক্ষায় বসছে। তাদের মধ্যে প্রায় ১৫ জন শিক্ষার্থী ঝরে গেছে। কারণ উল্লেখ করে এই শিক্ষক বলেন, করোনাকালে নিয়মিত বিদ্যালয়ে যেতে পারেনি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অনেক অস্বচ্ছল পরিবারের মেয়েদের বাল্যবিয়ে হয়েছে ও অনেকে ঝরে গেছে। পরে আমরা যোগাযোগ করলেও বিয়ের পরে তারা পড়াশোনা চালিয়ে যেতে রাজি হয়নি।

চৌগাছা উপজেলার আন্দুলিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অন্তত ১৮ জন ছাত্রীর বাল্যবিয়ে হয়েছে। এদের মধ্যে ৪ জন লেখাপড়া বন্ধ করে দিয়েছে। বাকিরা লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছে। আন্দুলিয়া স্কুলের একজন শিক্ষক নামপ্রকাশ না করার শর্তে বলেন, স্কুলের ছাত্রীদের মধ্যে যাদের বাল্যবিয়ে হয়েছে, তাদের অধিকাংশই একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের মানুষ। বর্ণ বৈষম্যের কারণে তাদের অভিভাবকদের দাবি, মেয়েকে বেশি লেখাপড়া করালে যোগ্য পাত্র খুঁজে পাবে না। তাই অল্প বয়সে কম শিক্ষিত মেয়েদের বিয়ে দেয়ার প্রবণতা তাদের মধ্যে বেশি।

করোনাকালে সামাজিক ও অর্থনৈতিক সংকট প্রকট আকার ধারণ করায়ও দরিদ্র পরিবারের অভিভাবকরা মেয়েদের বাল্যবিয়ে দিচ্ছে। চৌগাছা মাকাপুর-বল্লভপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম বলেন, করোনাকালে স্কুলের অন্তত ৮ জন ছাত্রীর বাল্যবিয়ে হয়েছে। অভিভাবকদের অসচেতনতায় বাল্যবিয়ের প্রবণতা বাড়ছে। অভিভাবকরা মনে করে মেয়ে বড় হচ্ছে, মানে বোঝা হয়ে যাচ্ছে। তাকে বিয়ে দিতে পারলেই চাপমুক্ত হতে পারবে। এজন্য তারা বাল্য অবস্থায় বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে।

যশোর শহরের মধুসূদন তারাপ্রসন্ন (এমএসটিপি) কলেজিয়েট গার্লস স্কুলের অধ্যক্ষ খায়রুল আনাম বলেন, গতবছরের চেয়ে এবার পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে। করোনাকালে কতজনের বাল্যবিয়ে হয়েছে সঠিক পরিসংখ্যান নেই। তবে দুই-একজনের বিয়ে হয়েছে শুনেছি।

এদিকে, গত ১০ সেপ্টেম্বর যশোর জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় এসএসসি পরীক্ষা বিষয়ে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে প্রশাসন। পরীক্ষা শুরুর আগে শিক্ষার্থীরা যেন যানজটের কবলে না পড়ে সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ট্রাফিক পুলিশ বিভাগ কঠোর অবস্থানে থাকবে বলে জানিয়েছিলেন যশোরের জেলা প্রশাসক মো. তমিজুল ইসলাম খান।

Leave A Reply

Your email address will not be published.