Take a fresh look at your lifestyle.

যশোরের সামছুদ্দিন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সৈনিক

0

প্রতিবেদক :
কে কে সামছুদ্দিন। বয়স এখন ৯৮ বছর। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সৈনিক ছিলেন যশোরের এই শতবর্ষী সামছুদ্দিন। বয়সের ভাড়ে স্মরণশক্তি কিছুটা কমে গেলেও মাঝে মাঝে বলে ওঠেন যুদ্ধের লোমহর্ষক কাহিনী। এখন তার সময় কাটে নামাজ, পবিত্র কোরআন আর বই পড়ে।

যশোর সদর উপজেলার দৌগাছিয়া গ্রামে বসতবাড়ি হলেও তিনি এখন যশোর শহরের পুরাতন কসবা বিবি রোড (মাদ্রাসা মহল্লা) এলাকায় বড় মেয়ের জামাই আবুল হোসেনের বাড়িতে থাকেন। নাতির ছেলে বোরহানউদ্দিনই তার দেখাশোনা করেন।

ভাঙা ভাঙা কণ্ঠে কে কে সামছুদ্দিন জানান দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কিছু গল্প। আবার অনেক সময় কথা বলতে না পারলে আকারে-ইঙ্গিতে কথা বোঝান তিনি। যুদ্ধের লোমহর্ষক কাহিনী তুলে ধরা হলো :

যুদ্ধের সময় খাকি পোশাক ও মাথায় পাগড়ি পরতেন। তিনি সিঙ্গাপুরে যুদ্ধ করেছেন। চারিদিকে ঘিরে ফেলে সৈন্যরা। আত্মসমর্পণের আহ্বান প্রত্যাখান করে যুদ্ধ চালিয়ে গেছে জাপানি সেনাদের বিরুদ্ধে তার ইউনিট।
যুদ্ধের সময় চালিয়েছেন মেশিনগান-স্টেনগান।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশ বাহিনীর পক্ষে লড়াই করা বাংলাদেশি (তৎকালীন পূর্ববাংলা) সৈন্যদের বীরত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। ভূমধ্যসাগর, মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার রণাঙ্গনে অংশ নিয়েছেন তারা। রসদ সরবরাহ থেকে শুরু করে সম্মুখসমরেও বড় ভূমিকা রয়েছে তাদের।

জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পার করেছেন দুর্বিসহ সময়। যুদ্ধে সাহসিকতার জন্য ব্রিটিশ সরকারের পক্ষ থেকে পেয়েছেন পদক। তবে একাত্তরের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তার সেসব পদক, যুদ্ধদিনের স্মারক ও ছবি সবই নষ্ট করে দেয় পাকিস্তানি সেনারা।

১৯৩৯ থেকে ১৯৪৫ এর পুরো সময়ই যুদ্ধের ময়দানে ছিলেন কে কে সামছুদ্দিন। যুদ্ধ চলাকালে একবার সিঙ্গাপুরে তিন হাজার সহযোদ্ধাসহ অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছিলেন। ওই অবস্থাতেই তিনমাস যুদ্ধ চালিয়ে যান তারা।

কে কে সামছুদ্দিনের বড় মেয়ে খাদিজা খাতুন বলেন, ছোট বেলায় বাবার মুখে যুদ্ধের অনেক গল্প শুনেছি। তিনি সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়াতে লড়াই করেছিলেন। সিঙ্গাপুরে লড়াই চলাকালে কখনও দুদিন, কখনও চার দিন পর্যন্ত সামান্য খাবার কিংবা শুধু পানি খেয়ে থাকতে হয়েছিল। আবার অনেক সময় তাদের গাছের পাতা খেতে হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ভারতের কেরালায় বাবার জন্ম। দাদাদের হাজার বিঘা জমির উপরে ছিল রাবারের বাগান। খুব ছোট থাকতে মা (দাদি) মারা যায়। পরে দাদা আর একটি বিয়ে করেন। বাবা (কে কে সামছুদ্দিন) দশম শ্রেণির ছাত্র; ক্লাসের ফার্স্টবয় ছিলেন। তার সৎ মায়ের বকাঝকা ও বাবার খারাপ আচরণের কারণে রাগ করে বাড়ি ছেড়ে মাদ্রাজের এক মামার বাড়ি চলে যান। এরপর ১৯৩৫ সালে ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান আর্মিতে সৈনিক পদে যোগ দেন। তার সৈনিক নম্বর ৬৪১৪৬০।

তিনি জানান, যুদ্ধের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বাবা যুদ্ধের ময়দানেই ছিলেন। দেশভাগের পর তিনি বাংলাদেশে স্থায়ী হন। কিছুকাল পরই সেনাবাহিনী থেকে অবসরে যান।

এরপর যশোর সদরের দোগাছিয়া গ্রামে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু। কে কে সামছুদ্দিনের দুই ছেলে ও দুই মেয়ে। স্ত্রী জাহেদা খাতুন মারা গেছেন ১৯৯৯ সালে।

বিশ্বযুদ্ধে অবদান ও ব্রিটিশ সশস্ত্র বাহিনীর সাবেক সদস্য হিসেবে ব্রিটিশ সরকারের কাছ থেকে তিনমাস পর পর ব্রিটিশ সরকার ১৬ হাজার টাকা এবং সেনাবাহিনী থেকে প্রতি মাসে কিছু পেনশন পান তার বাবা। ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান আর্মির হয়ে বিশ্বযুদ্ধে লড়াইকারীদের মধ্যে সামছুদ্দিনসহ ৯ বাংলাদেশি সৈনিক এখনও বেঁচে রয়েছেন।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যারা অংশগ্রহণ করেছে বাংলাদেশ থেকে তাদের স্মৃতি ধরে রাখার ব্যবস্থা করা গেলে আগামী প্রজন্ম তাদের বীরত্বের কাহিনি জানতে পারবে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.