Take a fresh look at your lifestyle.

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ছে

0

সংবাদকক্ষ :

জ্বালানি তেলের দাম না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে সরকার। নতুন করে দেশের বাজারে ডিজেল ও অকটেনের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, দেশে ডলার সংকট, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম ও বিপিসির আর্থিক সক্ষমতা বিবেচনা করে সরকার বাধ্য হয়ে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর ব্যাপারে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বৃহস্পতিবার বলেন, ‘জ্বালানি তেলের দাম এখন বিশ্ববাজারে যে পর্যায়ে আছে তাতে আমাদের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গেছে। জ্বালানি সাশ্রয়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার পরও দেখা যাচ্ছে এটা পর্যাপ্ত নয়। আমি মনে করি বিশ্ববাজারের সঙ্গে দেশে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করা উচিত।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্ববাজারে দাম বাড়ার কারণে জ্বালানি তেলের ভর্তুকি বাবদ আমাদের প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের সঙ্গে আমাদের দেশের জ্বালানি তেলের দামের ফারাক প্রতি লিটারে প্রায় ৩৫-৪০ টাকা। দাম না বাড়লে প্রচুর পরিমাণে তেল পাচার হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। এই সব কারণে আমরা চিন্তা করছি দাম সমন্বয় করার।’ গত ১৮ জুলাই তিনি বলেছিলেন ‘আমরা এখন জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর চিন্তা করছি না।’

দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়ার অংশ হয়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অপারেশন বিভাগ চলতি সপ্তাহে বেশ কিছু প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে জমা দিয়েছে। এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত দুটি সূত্র জানিয়েছে, ডিজেলের দাম সহনীয় পর্যায়ে রেখে অকটেন ও পেট্রলের দাম বেশি বাড়ানোর চিন্তা করছে সরকার। ওই মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা প্রায় ১২টির মতো প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে জমা দিয়েছি। এই প্রস্তাবগুলোতে জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজার, দাম বাড়ার ফলে মূল্যস্ফীতিতে কী প্রভাব পড়বে, বিপিসির আর্থিক সক্ষমতা ইত্যাদি বর্ণনা করা হয়েছে।’

বিপিসির তথ্য অনুযায়ী, জ্বালানি তেলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় ডিজেল, যা মোট জ্বালানির ৭৩ শতাংশ। গত বছরের নভেম্বরে ডিজেলের দাম ৬৫ থেকে বাড়িয়ে ৮০ টাকা করা হয়। বিপিসি বলছে, প্রতি ব্যারেল ডিজেল গত বছরের ডিসেম্বর মাসে কেনা হয়েছে ৮৩-৮৬ মার্কিন ডলারে, এখন কিনতে হচ্ছে ১৭৩-১৭৫ মার্কিন ডলারে। প্রতি লিটারে সরকারকে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে গড়ে ৫৫ টাকা। প্রতি লিটার অকটেনে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে প্রায় ৩৫ টাকা। সম্প্রতি বিপিসির চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ বলেন, বিপিসি যেভাবে ভর্তুকি দিচ্ছে তাতে প্রতিষ্ঠানটির দেউলিয়া হওয়ার আশঙ্কা আছে।

বিপিসির মুনাফা
এদিকে জুন, ২০১৬ থেকে জুন, ২০২১—এই পাঁচ অর্থবছরের বিবিসি জ্বালানি তেল বিক্রি করে কর বাদ দিয়ে মুনাফা করেছে ৩৮ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা। আর সরকারকে কর দিয়েছে ৭ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা।

দাম বাড়ানোর নীতি স্পষ্ট নয়
বিশ্বব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘সরকার কোন নীতিতে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় তা স্পষ্ট নয়। ২০১৪-২০ পর্যন্ত যখন বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কম ছিল সরকার কিন্তু দাম কমায়নি। এখন বেশি দামের দোহাই দিয়ে দাম বাড়াচ্ছে। দাম বাড়ালে বাড়াবে আর কমলে কমাবে না, তা সরকারের নীতি হতে পারে না। সরকারকে জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয় নীতি স্পষ্ট করতে হবে।’

ডিজেলের দাম কমছে
আন্তর্জাতিক বাজারে ডিজেলের দাম কমতে শুরু করেছে। গত ৬ জুলাই ডিজেলের দাম ছিল প্রতি ব্যারেল ১৬২ মার্কিন ডলার। ১ আগস্ট তা বিক্রি হয়েছে ১৩২ ডলারে। যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক জ্বালানি ও খনিজবিষয়ক বৈশ্বিক গবেষণা ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান উড ম্যাকেঞ্জি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ডিজেলের দাম সেপ্টেম্বর নাগাদ কমতে থাকবে। কারণ সেপ্টেম্বর থেকে সৌদি আরব, নাইজেরিয়া ও কুয়েতের বেশ কিছু পরিশোধনাগার বাজারে ডিজেল সরবরাহ করবে। প্রতিষ্ঠানটির অনুমান, এই বছরের তৃতীয় প্রান্তিকের শুরুর দিকে প্রতিদিন অতিরিক্ত ২৫ লাখ ব্যারেল ডিজেল বাজারে আসবে।

উড ম্যাকেঞ্জির মতে, ডিজেল পরিশোধনাগারগুলো অন্যান্য সময়ের তুলনায় সবচেয়ে বেশি লাভ করছে। পরিশোধনাগারগুলোর লাভ এখন ব্যারেল প্রতি ৩০ ডলারে ঠেকেছে, যা আগে ৫ ডলার মতো ছিল। ২০২০ সালে করোনা মহামারির কারণে চাহিদা কম থাকায় বিশ্বব্যাপী প্রায় ৩০ লাখ ব্যারেল সক্ষমতার অনেক পরিশোধনাগার বন্ধ হয়ে যায়।

Leave A Reply

Your email address will not be published.